সুসমাচার মানে কি?
22-08-2024মার্টিন লুথার কিভাবে মারা যান?
03-09-2024আপনি কেন কাজ করেন?
আপনি কেন কাজ করেন? একবার আমি এর এক হতাশাজনক উত্তর শুনেছিলাম যা ছিল এরকম: “আমরা চাকরী করি, যেন আমরা আমাদের সন্তানদেরকে জুতো কিনে দিতে পারি, যেন তারা স্কুলে যেতে পারে, যেন তারাও একদিন চাকরী করে, তারা তাদের সন্তানদেরকে জুতো কিনে দিতে পারে, যেন তারা ………..।” অন্য কথায়, কাজ অর্থহীন। বস্তুত, এই দৃষ্টি-ভঙ্গি অনুসারে জীবনও অর্থহীন হয়ে পড়ে – এ শুধু যেন অশেষ এক চক্র।
আমি এমনও বলতে শুনেছি যে, আমরা কাজ করি যেন আমরা পরিচর্যা-কাজগুলোকে অর্থ-সহায়তা দিতে পারি, যেগুলো সত্যিকারভাবে কাজ করে – রাজ্যের কাজ করে। এখানে এটা বলে রাখা ভাল যে, আমি কিন্তু পরিচর্যা-কাজে দান দেয়ার বিরুদ্ধে কথা বলছি না। বস্তুত, আমি মনে করি, কেন আপনি পরিচর্যা-কাজে দান করতে বাধ্যবাদকতায় আছেন, সে বিষয়ে বাইবেল-ভিত্তিক শক্তিশালী কারণ দাঁড় করাতে পারেন। কিন্তু আমি এখনও এ বিষয়ে নিশ্চিত না যে, এটা কাজের সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম।
তাই পুনরায় প্রশ্ন করি, আপনি কেন কাজ করেন? আমি এর উত্তর গীতসংহীতা ১০৪ -এর শুরুর দিক থেকে দেখি। গীতসংহীতা ১০৪ হলো সৃষ্টির উপর এক প্রতিফলন এবং এমনকি এটা হতে পারে আদিপুস্তক ৬-৮ অধ্যায়ের মহা জল-প্লাবনের উপর এক প্রতিফলন। আমরা দেখি, গীতরচয়িতা কেবলমাত্র কাব্যিকভাবেই ঈশ্বর কর্তৃক এ পৃথিবী এবং সকল প্রাণী সৃষ্টিকে বর্ণনা করছেন না, কিন্তু আমরা আরও দেখি, তাঁর সৃষ্টি এবং যে প্রাণীদের তিনি তৈরি করেছেন, তাদের টিকিয়ে রাখায় তাঁর অন্তরঙ্গ কাজ রয়েছে (১–১৩ পদ)।
১৪ পদে, আমরা পাঠ করে দেখি যে, ঈশ্বর পশুপাখী এবং মানুষ উভয়ের জন্যই যুগিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা এও পাঠ করি যে, মানুষের একটা ভূমিকা রয়েছে। তাদেরকে গাছ-পালা চাষাবাদ করতে হয় যার বৃদ্ধি ঈশ্বর দেন। এখানে আমরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি-বাহককে কাজের পদক্ষেপ নিতে দেখতে পাই। যেহেতু আমরা যারা ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতে সৃষ্ট হয়েছি, আমাদেরকে পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব করতে হবে এবং বশীভূত করতে হবে। আমাদেরকে সেই মূল, ঈশ্বর-প্রদত্ত বাগানকে বর্ধিত করতে হবে। এখানে আমরা আদিপুস্তক ১:২৬-২৮ পদের একটি কৃষ্টিগত হুকুমের প্রয়োগ দেখতে পাই।
আমরা এটা গীতসংহীতা ১০৪ গীতের ২১-২২ পদেও দেখতে পাই। সিংহ যেমন বাইরে শিকারের অন্বেষণে যায় – তারা যেভাবে সৃষ্ট সেভাবেই তারা কাজ করে – তদ্রূপ মানুষও বাইরে “তার কাজে যায় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে” (২৩ পদ)। এখানে যে সামঞ্জস্য আছে তা হারানো উচিত হবে না। ঈশ্বরের, মহান ও ক্ষুদ্র, সমস্ত প্রাণীকেই, তাদের মূল, সৃষ্টিকালীন পরিকল্পনা অনুসারে কর্মরত হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিংহদেরকে সিংহ হিসেবে “কাজ করতে” তৈরি করা হয়েছে। আমাদেরকে প্রতিমূর্ত্তি-বাহক হিসেবেই কাজ করতে তৈরী করা হয়েছে। বস্তুত, গীতরচক শুধুমাত্র প্রাণী থেকে প্রাণীতে এমন মসৃণ পথে এগিয়ে যান নি, কিন্তু প্রাণী থেকে সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। ঠিক তার পরের পদেই, ২৪ পদে, গীতরচক ঘোষণা করেন, “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সেই সমস্ত নির্মাণ করেছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।”
আমাদের কাজের অর্থ আছে। আমাদের কাজ যাঁর প্রতিমূর্ত্তিতে
আমরা নির্মিত তাঁর দিকে ইংগিত করে।
গীতরচক চান যেন আমরা আমাদের কাজ এবং বৃহত্তর অর্থের প্রসঙ্গগুলোর মাঝে কিছু সংযোগ স্থাপন করি। আমরা যখন কাজ করি, আমরা সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের কাজকে প্রতিফলিত করি। আমাদের বশীভূত করা এবং কর্তৃত্ব করার কাজে, আমাদের চাষাবাদ করার কাজে, আমরা অন্য কিছু দেখতে পাই। আমরা যার প্রতিমূর্ত্তিতে সৃষ্ট, আমাদের কাজ তাঁর সম্পর্কে সাক্ষ্য বহন করে এবং তাঁর দিকে ইংগিত করে। আমাদের কাজ সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এক সাক্ষ্য, এক নির্দেশক। সি. এস. লুইস একবার বলেছিলেন, আমরা কখনই সাধারণ কোন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাই নি। হয়তো আমরা এটাকে শব্দান্তকরণ করে বলতে পারি: আমরা কখনই কোন সাধারণ কাজ করি না। কাজ কখনই ছোট, তুচ্ছ, উদ্দেশ্যহীন, অযৌক্তিক, অথবা অর্থহীন নয়। আমাদের কাজকে এর অর্থ এবং তাৎপর্যের প্রাচুর্যপূর্ণতা দিয়েই সবচেয়ে ভালভাবে বুঝা যায়।
কিন্তু, অপেক্ষা করুন, বলার মত আরও বেশী কিছু রয়েছে। ২৫- ২৬ পদে, আমরা পড়লে দেখব:
ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ,
তথায় জঙ্গমেরা থাকে, তারা অগণ্য;
ক্ষুদ্র ও প্রকাণ্ড কত জীবজন্তু থাকে।
তথায় পোতরাজি বিহার করে,
তথায় সেই লিবিয়াথন থাকে, যা তুমি তথায় লীলা করবার জন্য নির্মাণ করেছ।
পরিষ্কারভাবে সমুদ্র এবং সমুদ্রের প্রাণীসকল ঈশ্বরের মহত্ততা, মহিমাময়তা, এবং সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু ২৬ পদটি নিবিড়ভাবে দেখুন। গীতরচক দু’টো জিনিসকে সমান্তরালে রাখেন: জাহাজ ও লিবিয়াথন। গীতসংহিতা এবং ইয়োবের মত, কাব্যিক পুস্তকগুলো, এবং কোন কোন উপলক্ষে ভাববাদী পুস্তকও, লিবিয়াথন নামী এ প্রাণীকে ইংগিত করে। এই প্রাণীর সঠিক পরিচয় নিয়ে অনুমানের কোন কমতি নেই। এটা কি বৃহৎ তিমি? এটা কি ডাইনোসর? এটা কি দৈত্যাকার স্কুইড? আমরা নিশ্চিতভাবে যা জানি, তা হলো লিবিয়াথন আমাদের শ্বাস-বায়ু নিয়ে যায়। আমরা সাধারণত দারুণ শব্দটি প্রায়ই অনেক বেশী ব্যবহার করি এবং এর পরিণতি হিসেবে এর অলংকারপূর্ণ ভাবটিকে হ্রাস করে ফেলি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাক্যটি উপযুক্ত। লিবিয়াথন আসলেই দারুণ।
লিবিয়াথন খেলতেও পছন্দ করে। আমাদের তা বাদ দিতে পারি না। যোনাথন এ্যাডওয়ার্ডস, উড়ন্ত মাকড়শার বিষয়ে লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, যখন এই মাকড়শা উড়ে, তখন এর মুখে হাঁসি লুকিয়ে থাকে। এই বিষয়টিই এ্যাডওয়ার্ডসকে এমন সারাংশ টানতে চালিত করেছে যে, ঈশ্বর “সমস্ত ধরণের প্রাণীর জন্য, এমন কি পোকামাকড়ের জন্যও আনন্দ এবং বিনোদন” যোগান দেন। এমনকি লিবিয়াথনের জন্যও তিনি যোগান দেন। এই আশ্চর্যময় দানব খেলা করে। এবং পরে ২৬ পদে আরেকটি প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। এই প্রাণী হলো মানুষ-নির্মিত: “এটি হলো জাহাজ।” এখন, আমাদেরকে এ নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং আমাদের সৃষ্টিকে পাশাপাশি রাখা হয়েছে, সমান্তরালভাবে একটির পাশে আরেকটিকে রাখা হয়েছে। গীতরচক লিবিয়াথন নিয়ে চমৎকৃত, এবং গীতকারক জাহাজেও চমৎকৃত। আপনি এটার ছবি কল্পনা করতে পারেন। হয়তো আপনি নিজে নিজেকে এমনটি বলেছেন: “ঐ দেখ, জাহাজ যাচ্ছে। কি বিস্ময়কর।”
জাহাজ তৈরীতে কি লাগে? গণিত এবং পদার্থ বিজ্ঞান, দক্ষ কাঠমিস্ত্রী, অভিজ্ঞতা, বহু ভুল ও সংশোধনের মধ্য দিয়ে আসা বহুস্তরব্যাপী-প্রজন্ম ধরে দেয় সুদক্ষতা, অনেক পরিশ্রম – জাহাজ তৈরীতে এই সমস্ত কিছুরই প্রয়োজন। জাহাজ ছাড়ার জন্য কি লাগে? দিক নির্দেশনাগত কৌশল, দক্ষতা, পেশী-শক্তি, শক্তিশালী মেরুদন্ড, শক্তিশালী বাহু, হিম্মৎ, দৃঢ়তা, প্রজন্ম-ব্যাপী সঞ্চিত প্রজ্ঞা – এই সমস্ত কিছুই জাহাজ ছাড়তে প্রয়োজন।
আমাদের গীতরচক বিস্মিত হয়েছেন যখন তিনি দেখেন যে জাহাজগুলো গভীর সমুদ্র পাড়ী দিচ্ছে। আমাদের গীতরচক বিস্মিত যখন তিনি দেখেন যে লিবিয়াথন সমুদ্রের পৃষ্ঠে খেলাচ্ছলে নাচছে। বস্তুত, এগুলো মনোমুগ্ধকর।
এই গীতসংহীতা পড়তে পড়তে আমরা আরও দেখি যে, সমুদ্র অতিক্রম করছে এবং ঢেউয়ের মধ্যে খেলা করছে, এমন প্রাকৃতিক ও মানুষ-সৃষ্ট দানব ছাড়াও আরও অধিক কিছু আছে। ২৭ পদ আমাদেরকে বলে: ঈশ্বরের সকল প্রাণীকূলকে ইংগিত করে বলা হচ্ছে, “এরা সকলেই তোমার অপেক্ষায় থাকে, যেন তুমি যথাসময়ে তাদেরকে ভক্ষ্য দেও. . . । তুমি হস্ত মুক্ত করলে, তাহারা মঙ্গলে তৃপ্ত হয়।” আমরা আমাদের কাজ থেকে আনন্দ পাই, আমরা পূর্ণতা পাই, আমরা অর্থ খুঁজে পাই। আমরা আমাদের ঈশ্বর-দত্ত উপহারগুলো, আমাদের ঈশ্বর-দত্ত সম্পদগুলো স্বীকার করি, এবং পরে আমরা কাজে যাই। এবং তখন আমরা পরিতৃপ্ত হই। দ্রাক্ষারস আমাদের হৃদয়কে প্রফুল্ল করে (১৫ পদ)। আমাদের সৃষ্টি আমাদেরকে বিমোহিত করে।
এই সমস্ত কিছুই আমাদের কাজের ফল। কিন্তু এর কোনটাই আমাদের কাজের প্রধান উদ্দেশ্য বা চুড়ান্ত ফল নয়। আমাদের কাজের প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে ৩১ পদে বলা হয়েছে: “সদাপ্রভুর গৌরব অনন্তকাল থাকুক, সদাপ্রভু আপন কার্য সকলে আনন্দ করুন।” আমাদের কাজের অর্থ আছে। আমাদের কাজ যাঁর প্রতিমূর্ত্তিতে
আমরা নির্মিত তাঁর দিকে ইংগিত করে। আমরা কাজ করে ঈশ্বরের প্রতি গৌরব নিয়ে আসি। আমরা যখন কাজ করি, আমাদেরকে নিয়ে ঈশ্বর আনন্দিত হন। আমরা কেন কাজ করি, এজন্য, এর উত্তর দিতে গিয়ে আমরা উছোট খাই।
আপনি কি খেয়াল করেছেন যে গীতসংহীতা ১০৪ এ কি নেই? সেখানে মন্দির বিষয়ে, মন্দিরের বাদ্যকরের বিষয়ে, যাজক এবং তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে কোন তথ্য নাই। সেখানে কৃষিকাজের বিষয় বলা হয়েছে। সেখানে দ্রাক্ষালতা পরিচর্যার বিষয়ে বলা হয়েছে। কায়িক পরিশ্রমের কথা বলা হয়েছে। কাজের কথা বলা হয়েছে। সেখানে জাহাজ তৈরী কথা বলা হয়েছে। “তথায় পোতরাজি বিহার করে।” ঈশ্বরের গৌরব হউক।
সম্পাদকীয় নোট: আটিক্যালটি মূলতঃ ২রা ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।