আপনি কেন কাজ করেন?
29-08-2024ক্রুশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল?
05-09-2024মার্টিন লুথার কিভাবে মারা যান?
মার্টিন লুথার মারা যান ১৫৪৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি। তার মৃত্যুর এক মাস আগে, তিনি তার বয়সজনিত দুর্বলতার বিষয়ে এক বন্ধুর কাছে অভিযোগ করে লিখেন, “আমি, বৃদ্ধ, ক্লান্ত, অলস, ক্ষয়প্রাপ্ত, শীতল, উষ্ণতাহীন, এবং তার উপরে, এক-চোখ কানা মানুষ।” তারপর তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, “আমি যেন অর্ধমৃত, আমাকে শান্তিতে যেতে দেয়া উচিত।”
তথাপি, লুথারকে শান্তিতে ত্যাগ করা হয় নি। সে সময়ে তার নিজের শহর ইসলেবেন এক সংকটের মুখে পড়ে। একটা বিবাদ নাগরিক শৃংখলা এবং এমন কি মাণ্ডলীক শৃংখলাকে হুমকিতে ফেলেছে। তিনি ক্ষয়প্রাপ্ত থাকলেও, লুথার সেই বিবাদ মিমাংসা করার জন্য তার নিজের শহরে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার তিন পুত্র, এবং কয়েকজন ভৃত্য সহ উইটেনবার্গ থেকে রওনা দেন। তারা হ্যালে পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিলেন। বরফ এবং ঝড়ের কারণে নদীগুলো পাড়ি দেয়া এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। লুথার, তাদের ফেরির দিকে সরাসরি ভেসে আসা বরফ টুকরোগুলোকে, বিপক্ষ এ্যানাব্যাপটিষ্টদের এবং রোমান ক্যাথলিক বিশপ ও পোপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হতে পারে তিনি প্রায় অর্ধ মৃত, কিন্তু এরপরেও তার রসবোধ অক্ষুণ্ণ ছিল।
লুথারের দীর্ঘ জীবনের সহকারী, ড. জাসটাস যোনাসের বাড়ী ছিল এই হ্যালে শহরে। ১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দে, লিপজিগে বিতর্কের সময় থেকেই, যোনাস লুথারের সবচে’ ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন। ডায়েট অব ওয়ার্মস-এর সময় তিনি লুথারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। লুথার যখন ওয়ার্টবুর্গে নির্বাসিত ছিলেন, তখন তিনি সংস্কারকে উইটেনবার্গের দিকে পরিচালিত করেছিলেন। আর এখন জাসটাস যোনাস লুথারের অন্তিম যাত্রার সঙ্গী।
লুথার এবং তার বিশাল সফর দল ইসলেবেনে বিজয়ের বেশে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। এ শহরেরই নায়ককে উল্লসিত জনতা আনন্দ-ধ্বনীসহ স্বাগত জানিয়েছিল এবং অশ্বারোহীদের দ্বারা পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জানুয়ারির ৩১ তারিখের সেই রবিবারে তিনি প্রচার করেছিলেন।
লুথার খ্রীষ্ট, এবং ক্রুশারোপীত খ্রীষ্ট বিষয়ে প্রচার করেন। যখন তার উপাসনা-দল
লুথারের প্রচার শুনতেন, তারা লুথারকে দেখতেন না কিন্তু তার পরিবর্তে খ্রীষ্ট ও ক্রুশারোপীত খ্রীষ্টকে দেখতেন। এটিই লুথারের কাছে আমাদের দায়।
কিন্তু সেই যাত্রা এর ঘন্টাধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছিল। লুথার তার প্রিয়তমা ক্যাটিকে, তিক্ত ঝড় এবং তুষার বৃষ্টি সম্পর্ক লিখেন, তবে সেই সমস্ত বরফের টুকরোর হুমকির কথা উল্লেখ করেন নি। এ সময়ে লুথার সাংঘাতিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। লুথারের রুমের ঠিক বাইরে, নিয়ন্ত্রণহীন এক আগুনও তার জীবনকে হুমকিতে ফেলেছিল। তার রুমও আশঙ্কার মধ্যে পড়েছিল। দেয়াল থেকে আস্তর খসে খসে পড়ছিল, যা দেয়ালের কয়েকটি পাথর-খণ্ডকে ঢিলা করে ফেলেছিল। শুনা যায় যে, বালিশের মত আকৃতির একটি পাথর-খণ্ড, লুথারের মাথা প্রায় চূর্ণই করে ফেলেছিল। এই ধরনের দুর্বিষহ অভিযান বাড়িতে ক্যাটিকে উদ্বিগ্ন করার কারণ হয়ে উঠেছিল। তিনি উদ্বিগ্নতা ও চিন্তার আগুন তার চিঠিতে প্রকাশ করেন। তাই, লুথার পাল্টা চিঠি লিখেছিলেন যে, তিনি তার সঙ্গ পাচ্ছেন না, এর সঙ্গে তিনি আরও লিখেন, “আমার দেখাশোনার একজন আছেন যে তোমার ও সকল স্বগৃদূতের চেয়েও উত্তম; তিনি একটি যাবপাত্রে শুয়ে আছেন এবং তিনি মাতৃক্রোড়ে রেখে সেবা করেন, যদিও তিনি সর্বশক্তিমান পিতা, ঈশ্বরের ডান পাশে বসে আছেন।”
লুথার ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ চিঠিটি লিখেন। তার ১১ দিন পর তিনি মারা যান। তার জন্মভূমি ইসলেবেন, এখন তার মৃত্যুর শহর হিসেবেও পরিচিত হতে যাচ্ছে। লুথারের তিন ছেলে তাদের বাবার মৃত দেহকে উইটেনবার্গে নেয়ার সঙ্গী হচ্ছেন, যেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লোকেরা সমবেত হবে।
তার মারা যাওয়ার ঠিক আগে, লুথার ইসলেবেনে তার মৃত্যুশয্যা থেকে প্রচার করেন যা ছিল তার শেষ প্রচার-বাণী। সে প্রচার-বাণীতে ছিল কেবল দুটো শাস্ত্রাংশের উদ্ধৃতি, একটি ছিল গীতসংহিতা থেকে এবং অন্যটি সুসমাচার থেকে। লুথার গীতসংহিতা ৬৮:১৯ উদ্ধৃত করেন “ধন্য ঈশ্বর, যিনি আমাদেরকে প্রতিদিন বহন করেন, ঈশ্বরই আমাদের পরিত্রাণ।” তারপর তিনি যোহন ৩:১৬ উদ্ধৃত করেন। আমাদের ঈশ্বর বস্তুত পরিত্রাণের ঈশ্বর, এবং সে পরিত্রাণ তাঁর পুত্রের কাজের মধ্য দিয়ে আসে।
চিত্রকর, লুকাস ক্র্যানেক তার বন্ধুর উদ্দেশ্যে সর্বশেষ স্মারক উৎসর্গ করেন। সেই চিত্রকর্ম ক্যাসল চার্চের বেদিকে শোভিত করে আসছে। এই চিত্রকর্মে দেখানো হয়েছে, লুথার বিশাল এক জনতার সামনে প্রচার করছেন। ক্র্যানেক লুথারের স্ত্রী, ক্যাটিকেও সেই ছবিতে চিত্রিত করেন। তিনি লুথারের মেয়ে মেগদেলিনা, যিনি তেরো বছর বয়সে মারা যান, তাকেও ছবিতে চিত্রায়িত করেন। লুথার ও তার মণ্ডলীর উপাসনা-দলের ছবির মধ্যে রাখা হয়েছে খ্রীষ্টকে। লুথার খ্রীষ্ট, এবং ক্রুশারোপীত খ্রীষ্ট বিষয়ে প্রচার করেন। যখন তার উপাসনা-দল লুথারের প্রচার শুনতেন, তারা লুথারকে দেখতেন না কিন্তু তার পরিবর্তে খ্রীষ্ট ও ক্রুশারোপীত খ্রীষ্টকে দেখতেন। এটিই লুথারের কাছে আমাদের দায়।
এবং সেই দায় লুথারের নিজের সময়কার লোকদেরকেও বহুদূর ছাড়িয়ে যায়।
১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দে, উইলিয়াম অডেন, লুথার ও তার দায়কে স্মরণ করে একটি কবিতা উৎসর্গ করেন। তিনি তার ছোট কবিতার শিরোনাম দেন ‘লুথার,’ যা এই লাইনগুলোর মধ্যদিয়ে শেষ হয়:
সমস্ত কর্ম, মহান মানব, সমাজ মন্দ।
“বিশ্বাস হেতুই ধার্মিক বাঁচে………” ভয়াল আর্ত-চিৎকার তাঁর।
অথচ আনন্দে বিভূর জগতের নর-নারী,
যারা জীবন নিয়ে কখনও নয় চিন্তিত বা বিচলিত।