মার্টিন লুথার কিভাবে মারা যান?
03-09-2024স্বাধীনতা-পক্ষপাতী: এর অর্থ কি?
10-09-2024ক্রুশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল?
লেখক: আর. সি. স্প্রৌল
সীমিত প্রায়শ্চিত্বের (যা “নির্দিষ্ট প্রায়শ্চিত্ব” বা “বিশিষ্ট মুক্তি” হিসেবেও পরিচিত) মতবাদ তুলে ধরে যে খ্রিষ্টের প্রায়শ্চিত্ব মনোনীতদের জন্য সীমিত (এর আওতা ও লক্ষ্যে) ছিল; যিশু এই জগতের প্রত্যেকের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ব করেন নি। আমার মাণ্ডলীক সম্প্রদায়ে, আমরা পরিচর্যা কাজে আগ্রহী এমন যুবকদের পরীক্ষা করি, এবং প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ “তুমি কি সীমিত প্রায়শ্চিত্বে বিশ্বাস কর?” ধরণের প্রশ্ন করবে। শিক্ষার্থীটি উত্তর দেবে, “হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি যে খ্রিষ্টের প্রায়শ্চিত্ব সকলের জন্য যথেষ্ট এবং কারো কারো জন্য কার্যকর,” অর্থাৎ ক্রুশের উপরে যিশুর মৃত্যুর মূল্য এতই মহান যে, এই জগতে জন্ম নেয়া প্রত্যেকের সমস্ত পাপ ঢেকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট কিন্তু যারা খ্রিষ্টেতে তাদের বিশ্বাস রাখে, শুধুমাত্র তাদের বেলায় প্রযোজ্য। তথাপি, এই বিবৃতি বির্তকের একেবারে প্রকৃত কেন্দ্রীয়-বিষয়ে যায় না, ক্রুশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছে না।
ঈশ্বরের অনন্তকালীন পরিকল্পনা বোঝার জন্য মূলত দু’টো উপায় রয়েছে। একটি ধারণা হচ্ছে যে, সমস্ত অনন্তকাল ধরে, পতিত মানব-বংশ থেকে সম্ভাব্য অধিক সংখ্যক লোককে রক্ষা করার ইচ্ছা ঈশ্বরের ছিল, তাই তিনি মুক্তির এই পরিকল্পনা ধারণ করলেন যদ্বারা তিনি পতিত লোকদের পাপ-বহনকারী হিসেবে তাঁর পুত্রকে এ জগতে প্রেরণ করবেন। যিশু সেই সকলের জন্য ক্রুশে যাবেন এবং মৃত্যুবরণ করবেন যারা এক সময়ে তাঁতে তাদের বিশ্বাস রাখবে। তাই এই পরিকল্পনা ছিল আপাতকালীন – ঈশ্বর সকলের জন্যই প্রায়শ্চিত্ব যোগালেন যারা এ থেকে সুবিধা গ্রহণ করবে, সে সকলের জন্যই যারা বিশ্বাস করবে। এর মূলে যে ধারণা রয়েছে তা হলো, যিশু সম্ভাব্য সকলের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু মূল কথা হচ্ছে যে তাত্ত্বিকভাবে সমস্ত কিছুই ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কেননা জগতের একেবারে শেষ ব্যক্তিটিও যিশুর কাজকে অগ্রাহ্য করতে পারে এবং তাদের অপরাধ ও পাপে মৃত থাকা বেছে নিতে পারে। এভাবে, ঈশ্বরের পরিকল্পনা হতাশাগ্রস্ত হতে পারে যদি কেউ এ থেকে সুবিধা গ্রহণ না করে। বর্তমানে মণ্ডলীতে প্রচলিত এরকম ধারণা প্রচলিত আছে যে – যিশু আপাতকালীন সকলের জন্যই মৃত্যুবরণ করেছেন। চুড়ান্ত বিশ্লেষণে, এমন চিন্তা উদ্রেক করে কিনা যে, পরিত্রাণ ঘটা ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে নির্ভর করে।
সংস্কার-পন্থি মতবাদ ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে ভিন্নভাবে বুঝে থাকে। এতে বলা হয় যে, ঈশ্বর, সমস্ত অনন্তকাল হতে, একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন যা আপাতকালীন ছিল না। এটা ছিল একটি মাত্র পরিকল্পনা “ক”, কাজ না করলে পরবর্তী পরিকল্পনা “খ” ছিল না। এই পরিকল্পনার অধীনে, ঈশ্বর রায় দিচ্ছেন যে তিনি পতিত মানবজাতি থেকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককে রক্ষা করবেন, এ লোকদেরকেই বাইবেলের মধ্যে মনোনীত বলা হয়েছে। ইতিহাসে মনোনয়নের এ পরিকল্পনা কার্যকর করতে, তিনি মনোনীতদের জন্য মুক্তির কাজ সম্পাদন করতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা সহকারে তাঁর পুত্রকে প্রেরণ করলেন। এ পরিকল্পনা সিদ্ধতার সাথে সম্পাদিত হয়েছে, খ্রিষ্টের রক্তের এক ফোটারও অপচয় হয় নি। পিতা যাদেরকেই পরিত্রাণের জন্য বাছাই করেছেন, তাদের প্রত্যেককেই এই প্রায়শ্চিত্বের মধ্যদিয়ে রক্ষা পাবে।
অ-সংস্কারপন্থি মতের নিহিতার্থ হচ্ছে এই যে, কারা পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছে ঈশ্বর তা আগে থেকে জানেন না। এই কারণে, এমন ধর্মতত্ত্ববিদও আছেন যারা আজকে বলছেন, “ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব তত বেশি লোককে তিনি রক্ষা করেন।” ঈশ্বর কত লোককে রক্ষা করতে পারেন? কত লোককে রক্ষা করার শক্তি তাঁর আছে? তিনি যদি সত্যিই ঈশ্বর হয়ে থাকেন, তবে সকলকেই রক্ষা করার ক্ষমতা তাঁর আছে। কত লোককে রক্ষা করার কর্তৃত্ব তাঁর আছে? ঈশ্বর যে কোন কারো জীবনে কি হস্তক্ষেপ করতে পারেন না, যেভাবে তিনি মোশীর জীবনে, অব্রাহামের জীবনে, অথবা প্রেরিত পৌলের জীবনে করেছিলেন, তাদেরকে তাঁর সাথে উদ্ধারের সম্পর্কে নিয়ে আসতে করেছিলেন? নিশ্চয়ই তাঁর তা করার অধিকার আছে।
“জগতের” জন্য যিশুর মারা যাওয়া বিষয়ে বাইবেলের কথাকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। যোহন ৩:১৬ পদটি এমন ভাষা ব্যবহারকারী প্রধান এক উদাহরণ। কিন্তু নূতন নিয়মে, যোহনের সুসমাচার সহ, একটি পাল্টা-ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যেখানে আমাদেরকে বলা হচ্ছে, যিশু তাঁর মেষদের জন্য ব্যতীত সকলের জন্য তাঁর জীবন দেন নি। যোহনের সুসমাচারে, মেষ বলতে, ঈশ্বর যাদেরকে যিশুর হাতে দিয়েছেন তিনি তাদের কথাই বলছেন।
যোহন ৬ অধ্যায়ে, আমরা যিশুকে বলতে দেখি, “পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আকর্ষণ না করলে কেউ আমার কাছে আসতে পারে না ” (পদ ৪৪ক), এবং এখানে যে শব্দকে “আকর্ষণ করা” হিসেবে ভাষান্তর করা হয়েছে তা যথার্থ অর্থে “বাধ্য করা” বুঝায়। যীশু সে একই অধ্যায়ে এও বলেছেন, “পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সেই সমস্ত আমারই কাছে আসবে” (পদ ৩৭ক)। তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, ঈশ্বর তাঁর পুত্রের কাছে আসতে যাদের জন্য পরিকল্পনা করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই আসবে, অন্য কেউ আসবে না। এভাবে, আপনার পরিত্রাণ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, ঈশ্বরের সার্বভৌম রায়ের উপরে নির্ভর করে, তাঁর অনুগ্রহে, আপনার প্রতি দয়া দেখাতে, যিনি স্থির করেছেন, এটা এই কারণে নয় যে তিনি আপনার মধ্যে এমন কিছু দেখেছেন যা এটা দাবী করেছে, কিন্তু তাঁর পুত্রের প্রেমের কারণে তিনি এটা করেন। আমার খ্রিষ্টান হওয়ার একটিমাত্র কারণ আকাশের নীচে আমি দিতে পারি, তা হচ্ছে, আমি পুত্রের কাছে পিতার এক উপহার, আমি কখনও কিছু করেছি অথবা করতে পারতাম বলে নয়।
এই অংশটি যোহনের উপরে আর. সি. স্প্রৌলের টীকা থেকে নেয়া হয়েছে।