স্বাধীনতা-পক্ষপাতী: এর অর্থ কি?

ক্রুশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল?
05-09-2024
The Instrumental Cause of Justification
নির্দোষিতার কার্য-সহায়ক কারণ
12-09-2024
ক্রুশে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি ছিল?
05-09-2024
The Instrumental Cause of Justification
নির্দোষিতার কার্য-সহায়ক কারণ
12-09-2024

স্বাধীনতা-পক্ষপাতী: এর অর্থ কি?

xr:d:DAFXk0WDSFg:25,j:45162075609,t:23011320

লেখক: আর. সি. স্প্রৌল
স্বাধীনতা-পক্ষপাতী অবস্থানের সারমর্ম কি? একজন নারী যদি বলেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গর্ভপাত করাবেন না কিন্তু এটা করতে অন্য কারোর অধিকারকে তিনি অস্বীকার করতেও চান না, তখন কিসের ভিত্তিতে এই নারী গর্ভপাত করাতে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন? হতে পারে তিনি সম্ভবত শুধু বেশি বেশি সন্তান নিতে চান এবং কখনই অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের সম্মুখীন হতে চান না। এই ব্যক্তি হয়তো ভ্রুণকে একটি জীবন্ত মানব-সত্ত্বা মনে করেন অথবা তিনি হয়তো ভ্রুণের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন যে ভ্রুণ হলো জীবন্ত এক মানব-সত্ত্বা, কিন্তু তিনি এই ধারণা অন্যদের উপরে চাপিয়ে দিতে চান না। এখানেই আমরা স্বাধীনতা-পক্ষপাত বিষয়ক দুরূহ জটিলতায় পৌঁছি। পছন্দ করার অধিকার কি পরম অধিকার? যা নৈতিকভাবে মন্দ, তা বেছে নেয়ার নৈতিক অধিকার কি আমাদের আছে? এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা মধ্যেই এর উত্তর পাওয়া যায়।
আবার, প্রত্যেক বিধিবদ্ধ আইন কারো না কারো স্বাধীনতাকে সীমিত করে বা নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই আইনের একান্ত বৈশিষ্ট। আমরা যদি আইন-প্রণয়নের মধ্যদিয়ে অন্য লোকদের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না চাই, তবে আমাদেরকে অবশ্যই আইন প্রণয়ন বন্ধ করে দিতে হবে এবং ভোট দান থেকে বিরত থাকতে হবে। আমি মনে করি যে বেশীর ভাগ লোক পছন্দের সে স্বাধীনতা মঞ্জুর করবে, তবে তা পরম স্বাধীনতা নাও হতে পারে। কোন মানব-সত্ত্বাই স্বয়ং পরম আইন নয়। যতক্ষণ না আমরা খাঁটি আপেক্ষিকতাবাদের নৈতিক নিয়ম-কানুন লাভ করতে প্রস্তুত থাকি, যার দ্বারা আইন ও সমাজ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি স্বায়ত্বশাসিত এমন প্রস্তাবনার নিরিখে আমাদেরকে ঝড়ের বেগে পলায়ন করতে হবে। এখন বিমূর্ত অবস্থা থেকে বাস্তবানুগ স্তরে এসে, আমি ভাবছি সিদ্ধান্তের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় কর্মীরা তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি সুরক্ষার আইনগুলো নিয়েও অভিযোগ করে কিনা? একজন চোর অন্যের টেলিভিশন চুরি করতে কারো ঘর ভেঙ্গে ফেলার মত সিদ্ধান্ত নেয়ার অবিভেদ্য অধিকার রাখে কিনা? একজন পুরুষ কি একজন নারীকে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা রাখে? এই চরম উদহারণগুলো এটাকে অবশ্যম্ভাবী করে যে, পছন্দের স্বাধীনতাকে পরম অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
পছন্দের স্বাধীনতা কোন সীমানায় শেষ হবে? আমি বিশ্বাস করি যেখানে আমার পছন্দের স্বাধীনতা অন্য আরেক ব্যক্তির জীবন ও স্বাধীনতা বিষয়ে অবিভেদ্য অধিকারে প্রবেশ করার সীমাতে প্রবেশ করে, সেখানেই এর শেষ হওয়া উচিত। কোন অনাগত শিশুরই নিজেকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়া বা প্রত্যাখান করার অধিকার কখনও থাকে না। বস্তুত, যেভাবে অন্যরাও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানব-সত্ত্বার জন্য সবচে‘ বেশী বিপদজনক স্থান হলো নারীর গর্ভের ভিতরে থাকা। লক্ষ লক্ষ অনাগত শিশু জন্য, গর্ভ হয়ে পড়েছে মৃত্যু পুরী। এক্ষেত্রে নারীর গর্ভের বন্দিকে কোন প্রকার বিচারের সুবিধা ছাড়াই অথবা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের কোন সুযোগ ছাড়াই পরিকল্পিত মৃত্যুদণ্ড দেয়া হচ্ছে। আক্ষরিকভাবে এক অঙ্গ থেকে আরেক অঙ্গ ছিন্ন করার মাধ্যমে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। এই বর্ণনাটিকে কি অতি মাত্রায় চিত্রায়িত করা হচ্ছে? এটা কি আবেগকে খুব বেশি উসকে দেয়? না। এটা কেবল তখনই এমন হতো, যদি বর্ণনাটা অসত্য হতো।
পছন্দ করার অধিকার, যতটাই পবিত্র হউক না কেন, এটা একটা মানব জীবন ধ্বংস করতে স্বেচ্চাচারী কোন অধিকার রাখে না। এটা একটা মানব শিশুর গর্ভপাতের মতই ন্যায়বিচার-সাধনেরও ব্যর্থতা।
পছন্দ করার স্বাধীনতায় মূলত কি রয়েছে যা একে এত বেশী মূল্যবান করে তুলেছে? কোন বিষয়টি প্যাট্রিক হেনরিকে চিৎকার করে এ বলতে প্ররোচিত করেছে যে, “আমাকে স্বাধীনতা দেও অথবা মৃত্যু দাও”? নিশ্চয়ই আমরা কিছু আত্ম-নির্ধারণের আকাঙ্খা পোষণ করি, এবং বাহ্যিক জবর দস্তীর অধীনে বসবাসের ধারণা একেবারেই ঘৃণার্হ। আমরা চিন্তাশীল প্রাণী, এবং আমরা সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতাকে মূল্য দিই। আমরা বেশীরভাগই বন্দী হওয়াকে ঘৃণা করব, কিন্তু এমন কি একেবারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা-বেষ্টিত সংশোধনাগারেও, সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতায় ব্যক্তির অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেয়া হয় না।
এটাই হলো আত্ম-নির্ধারণের নীতি – যেটি আমার নিজের অবস্থা ও ভবিষতের আলোকে বলতে পারি – প্রত্যেক অনাগত, গর্ভপাতের শিকার হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে পাশবিকভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। আমার মা আমাকে গর্ভপাত করাবেন অথবা আমাকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত বহন করবেন, মায়ের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমার বলার কিছুই ছিল না। আমার সমস্ত জীবনই তার হাতে ছিল। তিনি যদি গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে আমি জন্ম নেয়ার আগেই আমার জীবন-প্রদীপ নিভে যেত। আপনি ও আমি প্রকৃত মানব-সত্ত্বা। এক সময় আমরা আমাদের নিজেদের মূল্যবান স্বাধীনতার অধিকার চর্চার দিক থেকে অসহায় ছিলাম। সেই সময় আমরা আমাদের একান্ত অস্তিত্বের জন্য অন্য কারো ইচ্ছার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিলাম।
পছন্দ করার অধিকারের বিষয়ে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, একটি শিশুর জীবনের বিষয়ে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় বিষয়ক প্রশ্ন। (কারণ এতে যৌন-সম্পর্কিত নৈতিকতা জড়িত, যা এ আলোচনায় একেবারে অজনপ্রিয় বিষয়)। সন্তান নেয়া বা না নেয়া বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সন্তান গর্ভে আসা এবং এর বেড়ে উঠা শুরু হওয়ার পরে নয়। ধর্ষণের ক্ষেত্র ব্যতীত, গর্ভ-নিরোধক উপায় ব্যবহার করে বা না করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনও একটি সিদ্ধান্তের বিষয়। যৌনতা বা যৌনহীনতা ধরণের যে কোন সিদ্ধান্তই আমরা নিই না কেন, সর্বদাই এর পরিণতি রয়েছে। নীতিশাস্ত্র ও আইনের স্বতঃসিদ্ধতা এই যে, আমাদের স্বাধীন পছন্দগুলোর পরিণতির জন্য আমরাই দায়ী।
আমাদের যৌন সম্পর্কের সময়, আমরা আরেকটি মানব-জীবন সৃষ্টির ইচ্ছা নাও করতে পারি এবং নাও চাইতে পারি। তথাপি, আমরা এ বিষয়ে সচেতন যে, সেই শারীরিক যৌন সম্পর্ক পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করে এবং সন্তান উৎপাদন করতে পারে। সন্তানকে হত্যা করে এমন সিদ্ধান্তকে সামাল দেয়া কদাচিৎ কোন দায়িত্বশীল বা নৈতিক উপায় বলে গন্য হবে।

এই অংশটি আর. সি. স্প্রৌলের লেখা গর্ভপাত নামক পুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে।

আর. সি. স্প্রৌল
আর. সি. স্প্রৌল
ডঃ আর. সি. স্পৌল লিগোনিয়ার মিনিস্ট্রিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা, ফ্লোরিডাস্থ স্যানফোর্ড-এ সেন্ট এ্যান্ড্রুস চ্যাপেল -এর প্রতিষ্ঠাতা পালক, রিফরমেশন বাইবেল কলেজের প্রথম সভাপতি, এবং টেবলটক ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তার রেডিও প্রোগ্রাম, রিনিউইং ইয়োর মাইন্ড, আজও প্রতিদিন সমস্ত পৃথিবী জুড়ে, শত-শত রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার হয়ে থাকে এবং সেগুলো অনলাইনে শোনারও সুবিধা রয়েছে। একশতেরও বেশি পুস্তক তিনি লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্যা হোলিনেস অফ গড, চোজেন বাই গড, এবং এভরিওয়ানস্‌ এ্যা থিওলজিয়্যান। শাস্ত্রের নির্ভূলতার পক্ষ-সমর্থন করার ক্ষেত্রে এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপর দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে ঈশ্বরের লোকদের স্থির থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ব জুড়ে তিনি জনপ্রিয়।