যিশু খ্রিষ্ট: ঈশ্বরের মেষশাবক
13-04-2024সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহসিকতা
15-08-2024অনুতাপ কেমন হতে পারে?
গীতসংহিতা ৫১ অনুতাপসূচক গীতগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম গীত, যে গীতটি নাথন ভাববাদী কর্তৃক মুখোমুখী হওয়ার পর দায়ুদ কর্তৃক লিখিত হয়। নাথন ঘোষণা করেন যে, বৈৎশেবাকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে এবং তার স্বামী উরিয়কে হত্যা করে দায়ুদ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সাংঘাতিক পাপ করেছেন।
দায়ুদ কর্তৃক প্রকাশিত তীব্র মনঃকষ্ট ও আন্তরিক অনুশোচনার মাত্রা দেখা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদেরকে এও বুঝতে হবে যে, হৃদয় থেকে করা অনুতাপ পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের কাজ। দায়ুদের উপরে পবিত্র আত্মার প্রভাবের কারণে তিনি অনুতপ্ত। শুধু তা-ই নয়, তিনি যখন এই প্রার্থনাটি লেখেন, তিনি পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণার অধীনে এটি লিখছেন। পবিত্র আত্মা কিভাবে আমাদের হৃদয়ে অনুতাপ সৃষ্টি করেন, তা তিনি গীতসংহিতা ৫১-এ প্রদর্শণ করছেন। গীতটি আমাদের আলোচনার সময়ে এই বিষয়টি মনে রাখুন।
“হে ঈশ্বর, তোমার দয়ানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর; তোমার করুণার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম সকল মার্জনা কর” রকমের কথা দিয়ে গীতসংহিতা ৫১ শুরু হয়। এখানে আমরা অনুতাপের জন্য মৌলিক এক উপাদান দেখতে পাই। সাধারণত, একজন ব্যক্তি যখন তার পাপের বিষয়ে সচেতন হয় এবং তা থেকে ফিরে আসে, সে ঈশ্বরের দয়ার উপরে নিজেকে ছুঁড়ে দেয়। বিশুদ্ধ অনুতাপের প্রথম ফল হচ্ছে দয়া লাভের গভীর প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি। দায়ুদ ঈশ্বরের কাছে ন্যায়বিচার যাচ্ঞা করেন নি। তিনি জানেন যে, যদি ঈশ্বর তাঁর ন্যায়বিচার তাকে দেখান, তিনি তৎক্ষণাৎই ধ্বংসিত হবেন। ফলস্বরূপ, দায়ুদ দয়ার অনুনয় নিয়ে তার পাপস্বীকার শুরু করেন।
দায়ুদ যখন তার অধর্ম সকল মাজৃনা করার জন্য ঈশ্বরকে অনুনয় করছেন, তিনি তার আত্মা থেকে দাগ দূর করতে, তার অধার্মিকতাকে আচ্ছাদন করতে, এবং তার জীবনে স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসা পাপ হতে পরিষ্কৃত হতে অনুরোধ করছেন। তাই তিনি বলেন, “আমার অপরাধ হতে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর, আমার পাপ হতে আমাকে শুচি কর!” (গীতসংহিতা ৫১:২)।
ক্ষমা ও পরিষ্কৃত করার ধারণা সম্পর্কযুক্ত, কিন্তু এগুলো একই বিষয় নয়। নূতন নিয়মে, প্রেরিত যোহন লেখেন, “যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করবেন, এবং আমাদেরকে সমস্ত অধার্মিকতা হতে শুচি করবেন” (১ যোহন ১:৯)। অনুতাপের মনোভাব নিয়ে আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে যাই এবং আমাদের পাপ স্বীকার করি, কেবলমাত্র পাপের ক্ষমার জন্য নয়, কিন্তু সেই পাপ করা থেকে বিরত থাকতে শক্তিও যাচ্ঞা করি। এই গীতে দায়ুদ যেমনটি করেন, তেমনি আমরাও যাচ্ঞা করি যেন দুষ্টতার প্রতি আমাদের প্রবণতা দুরীকৃত হয়।
দায়ুদ আরও বলেন, “কেননা আমি নিজে আমার অধর্ম সকল জানি; আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে” (গীতসংহিতা ৫১:৩)। এটা সচরাচর করা হয় এমন কোন দোষ-স্বীকার নয়। তিনি প্রায়ই এরকম করার মত মানুষ; তিনি বলেন, “আমি জানি আমি দোষী।” তার দোষকে খাটো করে দেখার কোন প্রচেষ্টা এখানে নেই। আত্ম-নির্দোষিতার কোন প্রয়াশও নেই। আমরা, অন্যদিকে, প্রায়ই যুক্তি দেখানোর ক্ষেত্রে ওস্তাদ এবং আমাদের পাপপূর্ণ আচরণের ক্ষেত্রে সকল প্রকারের যুক্তি দিয়ে নিজেদের পক্ষে অজুহাত দাঁড় করানোয় তৎপর। কিন্তু এই শাস্ত্রাংশে, পবিত্র আত্মার শক্তিতে, দায়ুদকে এমন অবস্থানে আনা হচ্ছে যেখানে তিনি ঈশ্বরের সামনে সৎ থাকছেন। তিনি তার দোষ স্বীকার করেন, বুঝতে পারেন যে তার পাপ সতত বিদ্যমান। তিনি এ থেকে রেহাই পেতে পারেন না, এবং এটাই তাকে তাড়িত করছে।
পরে তিনি আর্তনাদ করেন, “তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি, তোমার দৃষ্টিতে যা কুৎসিত, তাই করেছি” (গীতসংহিতা ৫১:৪)। এক অর্থে, দায়ুদ এখানে অতিশয়োক্তি ব্যবহার করছেন। তিনি উরিয়ের বিরুদ্ধে, উরিয়ের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব, বৈৎশেবা, এবং ঈশ্বরের লোকদের সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে ভয়ানকভাবে পাপ করেছেন। কিন্তু দায়ুদ বুঝতে পারেন যে, পাপ শেষমেষ ঈশ্বরেরই বিরুদ্ধে আঘাত, কারণ এই বিশ্বভ্রক্ষ্মাণ্ডে ঈশ্বরই একমাত্র সিদ্ধ সত্তা। যেহেতু ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীর বিচারকর্তা, সমস্ত পাপই ঈশ্বরের ব্যবস্থার লঙ্ঘন এবং তাঁর পবিত্রতার বিরুদ্ধে আঘাত। দায়ুদ এটা জানেন এবং এটা স্বীকার করেন। তিনি মানবীয় সত্ত্বার বিরুদ্ধে তার পাপের বাস্তবতাকে খাটো করছেন না, কিন্তু তার পাপ চুড়ান্ত অর্থে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলে স্বীকার করেন।
পরে, তিনি এমন এক উক্তি করেন যা প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এটা ৪ পদের দ্বিতীয় অংশে দেখা যায় এবং এটা সত্যিকার অনুতাপের সবচে’ শক্তিশালী প্রকাশগুলোর একটি যা আমরা শাস্ত্রে পেতে পারি: “অতএব তুমি আপনার বাক্যে ধর্মময়, আপনার বিচারে নির্দোষ রয়েছ” (গীতসংহীতা ৫১:৪)। দায়ুদ মূলত বলছেন, “হে ঈশ্বর, আমার বিচার করার সমস্ত অধিকার তোমার আছে, এবং এটা পরিষ্কার যে তোমার বিচার ও তোমার ক্রোধের বাইরে আর কিছুই পাওয়ার যোগ্য আমি নই।” দায়ুদ স্বীকার করছেন যে ঈশ্বর নিখুঁৎ এবং তার বিচার করার সমস্ত অধিকার তাঁর আছে। ঈশ্বরের সাথে কোন দফারফা বা দরকষাকষি করার কিছু নেই।
“দেখ, অপরাধে আমার জন্ম হয়েছে, পাপে আমার মাতা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। দেখ, তুমি আন্তরিক সত্যে প্রীত, তুমি গূঢ় স্থানে আমাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে” (গীতসংহিতা ৫১:৫-৬)। ঈশ্বর কেবলমাত্র আমাদের কাছ থেকে সত্য চান না, তিনি আমাদের অন্তরের গভীর থেকে তা চান। দায়ুদ স্বীকার করেন যে ঈশ্বর যে আদেশ করেছেন, তা পালন করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, এবং তার বাধ্যতা অনেকাংশে তার সত্তার কেন্দ্র থেকে উৎসারিত হওয়ার বদলে সামান্য বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
পরে, দায়ুদ আবার শুচি হওয়ার জন্য আর্তনাদ করেন: “এসোব দ্বারা আমাকে শুচি কর, তাতে আমি শুচি হব; আমাকে ধৌত কর, তাতে আমি হিম অপেক্ষা শুক্ল হব” (গীতসংহিতা ৫১:৭)। আমরা দায়ুদের কন্ঠে একেবারে অসহায়ত্বের সুর শুনতে পাই। দায়ুদ বলেন নি, “ঈশ্বর, এক মিনিট অপেক্ষা করুন। প্রার্থনায় এই কথোপথন শুরু করার আগে, আমাকে আমার হাত পরিষ্কার করতে হবে। আমাকে ধৌত হতে হবে।” দায়ুদ জানেন যে তিনি নিজের থেকে তার দোষের দাগ মুছে ফেলতে অক্ষম। তিনি এটা পুরণের জন্য কিছু করতে পারেন না। আমাদেরকেও দায়ুদের স্বীকারোক্তির সাথে এক হয়ে বলতে হবে যে আমরা আমাদের নিজেদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি না।
যিশাইয় ভাববাদীর মধ্যদিয়ে, পরবর্তীতে ঈশ্বর এই প্রতিজ্ঞা করেছেন,
“সদাপ্রভু বলছেন, আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দুরবর্ণ হলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হলেও মেষলোমের ন্যায় হবে” (যিশাইয় ১:১৮)। ঈশ্বর যখন আমাদেরকে ময়লার মধ্যে দেখেন, তখন আমাদের পরিষ্কার করে তিনি সন্তুষ্ট হন।
পরে, দায়ুদ বলেন, “আমাকে আমোদ ও আনন্দের বাক্য শুনাও” (গীতসংহিতা ৫১:৮ক)। অনুতাপ ব্যথাদায়ক বিষয়। কে পাপ স্বীকার এবং দোষ স্বীকারের মধ্যদিয়ে গিয়ে আনন্দ উপভোগ করে? দোষ হচ্ছে সবচে’ শক্তিশালী আনন্দ ধ্বংসকারী। যদিও এ ক্ষণে দায়ুদ খুব সুখী নন, তিনি ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করছেন যেন ঈশ্বর তার আত্মা পুনঃস্থাপন করেন এবং পুনরায় তাকে আনন্দ ও খুশি অনুভব করতে দেন। তিনি এই বিষয়টি এ বলে তুলে ধরেন, “তোমা দ্বারা চুর্ণিত অস্থি সকল প্রফুল্ল হোক” (গীতসংহীতা ৫১:৮খ)। এটা কি বেশ মজার বাক্যাংশ নয়? তিনি বলেন,
ঈশ্বর, তুমি আমাকে চুর্ণ করেছ। আমার অস্থিসকল ভেঙ্গে গিয়েছে; শয়তান বা নাথন আমার অস্থি ভাঙ্গে নি, কিন্তু তুমি আমার দোষ ধরিয়ে দিয়ে আমার অস্থিসকল ভেঙ্গে দিয়েছ। তাই, একজন ভগ্ন মানুষ হিসেবে আমি তোমার সম্মুখে দাঁড়াই, এবং আমার যাওয়ার একটি মাত্র পথ আছে, তা হচ্ছে আমাকে তোমার আরোগ্য করা এবং আমার আনন্দ ও খুশি আমাকে ফিরিয়ে দেয়া।
পরে, তিনি বলেন, “আমার পাপসমুহের প্রতি মুখ আচ্ছাদন কর, আমার সকল অপরাধ মার্জনা কর। হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করে দেও” (গীতসংহিতা ৫১: ৯-১০)। বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্বর্গীয় পূনঃ-সৃষ্টির কাজ দ্বারা পাওয়া। আমি নিজের মধ্যে তা সৃষ্টি করতে পারি না। কেবলমাত্র ঈশ্বর নূতন অন্তঃকরণ সৃষ্টি করতে পারেন, এবং তিনি আমাদের পাপ মুছে দিয়ে নূতন অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেন।
তারপর, দায়ুদ আর্তনাদ করেন, “তোমার সম্মুখ হতে আমাকে দুর কর না, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমা হতে হরণ কর না” (গীতসংহিতা ৫১:১১)। দায়ুদ উপলব্ধি করেন যে, যে কোন পাপীর ক্ষেত্রে সবচে’ খারাপ যা ঘটতে পারে, তা হচ্ছে এটি। তিনি জানেন যে, যদি আমরা অনুতাপহীনতায় অবিরত চলতে থাকি, তবে ঈশ্বর তাঁর সামনে থেকে আমাদের দূর করে দেবেন। যিশু সতর্ক করেন, যারা তাঁকে প্রত্যাখান করবে, তারা ঈশ্বর থেকে চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু অনুতাপের প্রার্থনা হলো বিশ্বাসীদের জন্য আশ্রয় দূর্গ। ঈশ্বরিক কারো সাড়াদান এমন হবে যে, সে জানে সে পাপে আছে। এই ধরণের সাড়াদান বিশ্বাসান্তরীত সকলের জীবনকে চিহ্নিত করা উচিত।
দায়ুদ আরও বলেন, “তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও, ইচ্ছুক আত্মা দ্বারা আমাকে ধরে রাখ। আমি অধর্মাচারীদেরকে তোমার পথ শিক্ষা দেব, পাপীরা তোমার দিকে ফিরে আসবে।” (গীতসংহিতা ৫১:১২-১৩)। আমরা প্রায়ই শুনি যে লোকেরা প্রায়শ খ্রিষ্টানদের উপস্থিতিতে থাকতে চায় না, কারণ খ্রিষ্টানরা এক আত্মতৃপ্ত, আত্ম-ধার্মিক মনোভাব অথবা ন্যাকামি চাল-চলন, তোমা-থেকে-পবিত্রতর ধরনের মনোভাব প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। খ্রিষ্টানদের আত্ম-তৃপ্ত হওয়ার মত কিছুই নেই; আমরা এমন ধার্মিক লোক নই যে অধার্মিকদের সংশোধন করার চেষ্টা করছি। যেমন একজন বক্তা বলেছেন, “সুসমাচার-প্রচার ঠিক এক ভিক্ষুকের মত কাজ যে আরেক ভিক্ষুককে রুটির সন্ধান দিচ্ছে।” বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে ক্ষমাশীলতা। যিশু খ্রিষ্টের নামে একজন ব্যক্তিকে পরিচর্যাকারী হিসাবে যে একটি মাত্র বিষয় যোগ্য করে তোলে, তা হলো, সেই ব্যক্তি ক্ষমার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং তিনি অন্যদেরকে সে বিষয়ে বলতে চান।
“হে প্রভু, আমার ওষ্ঠাধর খুলে দেও, আমার মুখ তোমার প্রশংসা প্রচার করবে। কেননা তুমি বলিদানে প্রীত নহ, হলে তা দিতাম, হোমে তোমার সন্তোষ নেই। ঈশ্বরের গ্রাহ্যবলি ভগ্ন আত্মা; হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চুর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করবে না (গীতসংহিতা ৫১:১৫-১৭)। এখানে আমরা শেষের অধ্যায়ের মত ভাববাদীসুলভ অনুতাপের হৃদয় ও প্রাণ দেখতে পাই। ঈশ্বরিক অনুতাপের সত্যিকারের প্রকৃতি “হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করবে না” বাক্যাংশে দেখা যায়। দায়ুদ বলছেন যে যদি তিনি নিজের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে পারতেন, তিনি তা করতেন; কিন্তু বরাবরের মত এখানেও , তার একমাত্র আশা হচ্ছে যে ঈশ্বর তাঁর দয়ানুসারে তাকে গ্রাহ্য করবেন।
বাইবেল পরিষ্কারভাবে আমাদেরকে বলে এবং আকারে-ইঙ্গিতে আমাদের দেখিযে দেয় যে, ঈশ্বর অহংকারীদের প্রতিরোধ করেন এবং নম্রদেরকে অনুগ্রহ দেখান। দায়ুদ এই সত্য সম্পর্কে জানেন। তিনি যত ভগ্ন হচ্ছেন, তিনি তত ঈশ্বরকে এবং ঈশ্বর অনুতাপী লোকদের সাথে কতটুকু সম্পর্কিত হচ্ছেন তিনি জানেন। তিনি বুঝেন যে ঈশ্বর কখনই ভগ্ন ও চুর্ণ অন্তঃকরণকে ঘৃণা করেন না অথবা তুচ্ছ করেন না। এটাই ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে আকাংখা করেন। এটাই যিশুর অন্তরে ছিল যখন তিনি ধন্য-শিক্ষায় বলছেন, ধন্য যারা শোক করে, কেননা “তারা সান্ত্বনা পাবে” (মথি ৫:৪)। এই শাস্ত্রাংশ কেবল প্রিয়জনকে হারানোর শোকের বিষয়ের মত নয়, কিন্তু আমাদের পাপ সম্পর্কে প্রত্যয়ী হয়ে শোক করার অভিজ্ঞতার মত বিষয়। যিশু আমাদের নিশ্চিত করছেন যে, যখন আমরা আমাদের পাপের জন্য শোক করি, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা কর্তৃক আমাদেরকে সান্ত্বনা-দান করবেন।
আমি পরামর্শ দেব যেন সকল খ্রিষ্টান গীতসংহিতা ৫১ মুখস্থ করেন। এটা ঈশ্বরিক অনুতাপের এক সিদ্ধ নমুনা। আমার জীবনে অনেক সময়, আমি প্রভুর কাছে এসেছি এবং বলেছি, “হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর,” অথবা, “আমার অধর্মসকল মার্জনা কর। এসোব দ্বারা আমাকে শুচি কর। আমাকে ধৌত কর এবং আমাকে শুচি কর।” অনেক সময় আমি প্রার্থনা করেছি, “ হে ঈশ্বর, তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও,” এবং আর্তনাদ করেছি, “আমি তোমারই বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” যখন আমরা আমাদের দোষের বাস্তবতায় নিমজ্জিত হই, তখন ঈশ্বরের সামনে অনুতাপ করার মতো আমাদের কাছে আর কোন ভাষা থাকে না। সেই মুহূর্তগুলোতে স্বয়ং শাস্ত্রের এই কথাগুলো আমাদের মুখে থাকা সত্যিই এক আশীর্বাদ।
এই অংশবিশেষ আর. সি. স্প্রৌলের ক্রুশিয়্যাল কোয়েশ্চেনসের পুস্তিকা অনুতাপ কি? নামক পুস্তিকা থেকে নেয়া হয়েছে।