অনুতাপ কেমন হতে পারে?
12-08-2024
Reforming the Church
মণ্ডলী সংস্কারের আবশ্যকীয়তা বিষয়ে জন ক্যালভিন
20-08-2024
অনুতাপ কেমন হতে পারে?
12-08-2024
Reforming the Church
মণ্ডলী সংস্কারের আবশ্যকীয়তা বিষয়ে জন ক্যালভিন
20-08-2024

সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহসিকতা

আমরা যখন সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বকে অনুধাবন করার চেষ্টা করি, তখন এটা কেবলমাত্র পরিত্রাণের বিষয়ে আমাদের ধারণাকেই পরিবর্তন করে না, কিন্তু সমস্ত কিছুর বিষয়ে আমাদের ধারণাকে পরিবর্তন করে। এ কারণেই লোকেরা যখন সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বের প্রাথমিক পর্যায়ের মতবাদগুলোর মধ্যদিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং সেগুলোকে বুঝতে যায়, সেক্ষেত্রে তারা প্রায়ই এমন অনুভব করে থাকেন যেন তারা দ্বিতীয় বার বিশ্বাসান্তরীত হচ্ছেন। বস্তুত, আমার কাছে অনেকের স্বীকার মতে, বাস্তবতা হলো এই যে, তারা এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বাসান্তরীত হয়েছেন। তারা তাদের অনমনীয় চরম দুর্নীতি ও পাপে তাদের মৃত্যুর বাস্তবতা, ঈশ্বরের তাঁর নিজেদের জন্য নিঃশর্ত মনোনয়ন এবং অন্যদের দণ্ডাজ্ঞা, তাঁর লোকদের মুক্তির জন্য খ্রীষ্টের প্রকৃত অর্জন, পবিত্র আত্মার কার্যকরী অনুগ্রহ, ঈশ্বরের ধৈর্যশীল অনুগ্রহের কারণেই তাদের ধৈর্যের কারণ, এবং সমস্ত ইতিহাস জুড়ে তাঁর গৌরবের নিমিত্ত ঈশ্বরের চুক্তিগত কাজ সম্পর্কে, তাদের সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যদিয়ে সামনা-সামনি আসে। লোকেরা যখন শেষমেষ বুঝতে পারেন যে, তারা ঈশ্বরকে মনোনীত করেন নি কিন্তু তিনিই তাদেরকে মনোনীত করেছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিজেদের প্রতি ঈশ্বরের আশ্চর্য অনুগ্রহ দেখে তাঁর প্রতি বিনম্র স্বীকারের পর্যায়ে আসেন। কেবলমাত্র তখনই, আমরা উপলব্ধি করি যে, আমরা বাস্তবে কতই না হতভাগা, তবেই আমরা সত্যিকারভাবে “এ্যামেজিং গ্রেইস” গানটি গাইতে পারি। এবং সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব স্পষ্টভাবে তাই করে: এটা ভিতর থেকে আমাদেরকে রূপান্তরিত করে এবং এ গানটি গাইতে পরিচালনা দেয় – এটা আমাদেরকে আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের সার্বভৌম ও ত্রিত্ত্বে বিদ্যমান, অনুগ্রহশীল, এবং প্রেমময় ঈশ্বরের উপাসনায় পরিচালিত করে, কেবলমাত্র রবিবারে নয় কিন্তু প্রতিদিন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে। সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব কেবলমাত্র একটি পরিচয়-জ্ঞাপক চিহ্ন নয় যা আমরা পরিধান করি, কারণ সংস্কারকৃত হওয়া মানে জনপ্রিয় হওয়া এবং উপভোগ্য হওয়ার বিষয় নয়, এটা একটা ধর্মতত্ত্ব যাতে আমরা জীবন-যাপন করি এবং নিঃশ্বাস নিই, স্বীকার করি, এবং এমন কি যখন এটা আক্রমনের শিকার হয় আমরা একে রক্ষা করি। 

ষোড়শ শতাব্দির প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারকগণ, পনেরো শতাব্দির তাদের অগ্রদূতগণ এবং সতেরো শতাব্দির তাদের বংশধরগণ সমেত, শুধু জনপ্রিয় ও উপভোগ্য ছিল বলে তাদের মতবাদ শিক্ষা দেন নি এবং রক্ষা করেন নি, কিন্তু যেহেতু সেগুলো বাইবেল-ভিত্তিক ছিল, তা রক্ষা করতে তাদের জীবনও তারা দিয়েছিলেন। তারা শাস্ত্রের ধর্মতত্ত্বের জন্য শুধু মারা যেতে প্রস্তুত ছিলেন না, তারা এর জন্য বেঁচে থাকতে, দুঃখভোগ করতেও রাজী ছিলেন এবং এর জন্য নিজেদেরকে বোকা গন্য হতেও রাজী ছিলেন। ভুলে তারা তা করেন নি: সংস্কারকগণ তাদের নিজেদের আত্ম-বিশ্বাসের কারণে এবং আত্ম-উপলব্ধির কারণে সাহসী এবং নির্ভীক ছিলেন না, কিন্তু তারা এ সত্যের কারণে ছিলেন যে তারা সুসমাচারের দ্বারা নিজেরা বিনম্র হয়েছিলেন। তারা সাহসী ছিলেন কারণ তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা বসবাস করছিলেন এবং মিথ্যার অন্ধকার যুগে সত্যের আলো ঘোষণা করতে তারা সুসজ্জিভুত ছিলেন। যে সত্য তারা প্রচার করেছিলেন তা নূতন ছিল না; এটা ছিল প্রাচীন। এটা ছিল সাক্ষ্যমরদের, মণ্ডলীর পিতৃব্যদের, প্রেরিতদের, এবং পিতৃপুরুষদের মতবাদ – এটা ছিল ঈশ্বরের মতবাদ যা পবিত্র শাস্ত্রে নিহিত রয়েছে। 

সংস্কারকগণ তাদের নিজেদের ধর্মতত্ত্ব তৈরী করেন নি; বরং তাদের ধর্মতত্ত্ব তাদেরকে সংস্কারক বানিয়েছে। শাস্ত্রের ধর্মতত্ত্ব তাদেরকে সংস্কারক বানিয়েছে। কেননা তারা সংস্কারক হওয়ার জন্য তাদের যাত্রা শুরু করেন নি, তারা তাদের নিজের বৈশিষ্টের কারণে হয়ে গিয়েছেন – তারা ঈশ্বরের প্রতি এবং শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চেয়েছিলেন। সংস্কারের “সোলা” (শুধুমাত্র) বা অনুগ্রহ বিষয়ে মতবাদ (ক্যালভিনের পাঁচটি বিষয়) সংস্কারকদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয় নি, আবার সেগুলো সংস্কার মতবাদের সামষ্টিক ফল হিসেবেও আসে নি। বরং, সেগুলো ভিত্তিমূলক মতবাদগত ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল, যা পরবর্তী যুগের মণ্ডলী কি বিশ্বাস করে তা স্বীকার করতে ও রক্ষায় সাহায্য করতে কাজ করেছিল। এমন কি আজও, অনেকেই আছেন যারা মনে করেন যে, তারা সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাদের সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব সংস্কারের ‘সোলা’ এবং অনুগ্রহ মতবাদগুলোর গভীরতা পর্যন্ত যায়। আরও বলা যেতে পারে, এমন আরও অনেকেই আছেন যারা বলেন তারা সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব মেনে চলেন, কিন্তু তারা সংস্কারকৃত হয়েছেন কেউ জানে না। এমন “তত্ত্ব-নির্ভর ক্যালভিনবাদীরা” ষোড়শ অথবা সতেরো শতাব্দির ঐতিহাসিক কনফেশনগুলোর (স্বীকারোক্তি) কোনটি না তারা স্বীকার করেন না তারা স্বতন্ত্র-বৈশিষ্ট্যের সংস্কার-পন্থি ধর্মতাত্ত্বিক ভাষা ব্যবহার করেন। 

যাহোক, যদি আমরা ঐতিহাসিক সংস্কার-পন্থি কনফেশনসমূহ অনুসারে সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বকে সত্যিকারে মেনে চলি, আমরা নিশ্চিতভাবে সংস্কার-পন্থি হিসেবে চিহ্নিত হব। সত্য বিষয় হলো, “তত্ত্ব-নির্ভর ক্যালভিন-পন্থি” হিসেবে থাকা অসম্ভব, এবং সংস্কার-পন্থি হয়ে গেলে, কেউ জানবে না, তাও অসম্ভব – এটা অপরিহার্যভাবে বেরিয়ে আসবেই। ঐতিহাসিকভাবে সংস্কার-পন্থি হওয়ার জন্য, অবশ্যই সংস্কার-পন্থি কনফেশনগুলো মেনে চলতে হবে, এবং এটা শুধুমাত্র মেনে চললেই হবে না, কিন্তু স্বীকারও করতে হবে, ঘোষণা করতে হবে, এবং এটাকে সুরক্ষা করতে হবে। সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব মৌলিকভাবে কনফেশন-ভিত্তিক এক ধর্মতত্ত্ব। 

সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব আবার সর্ব-সংশ্লিষ্ট ধর্মতত্ত্ব। আমরা যা জানি এটা কেবলমাত্র তা পরিবর্তন করে না, কিন্তু আমরা যা জানি তা কিভাবে জানি এটা তারও পরিবর্তন করে। এটা ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকেই পরিবর্তন করে না, কিন্তু এটা আমাদের নিজেদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকেও পরিবর্তন করে। বস্তুত, এটা কেবলমাত্র পরিত্রাণ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাই পরিবর্তন করে না, কিন্তু আমরা কিভাবে উপাসনা করি, কিভাবে সুসমচার-প্রচার করি, কিভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের মানুষ করি, কিভাবে আমরা মণ্ডলীকে দেখি, কিভাবে আমরা প্রার্থনা করি, কিভাবে আমরা শাস্ত্র অধ্যয়ন করি, সেই দৃষ্টি ভঙ্গিরও পরিবর্তন করে – কিভাবে আমরা জীবন-যাপন করি, চলি, এবং আমাদের অন্তর্নিহিত সত্ত্বাকে পরিবর্তন করে। সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব এমন ধর্মতত্ত্ব নয়, যা আমরা লুকিয়ে রাখতে পারি, এবং এটা এমন কোন ধর্মতত্ত্ব নয় যার উদ্দেশ্যে আমরা শুধুমাত্র আন্তরিকতাহীন প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। কেননা সেটাই ইতিহাসজুড়ে ভ্রান্ত শিক্ষকদের এবং ধর্মতাত্ত্বিক প্রগতিশীলদের অভ্যাস হয়ে আসছে। তারা দাবী করেন যে তারা সংস্কার-পন্থি কনফেশনগুলো মেনে চলেন, কিন্তু তারা সত্যিকারে কখনও সেগুলোকে স্বীকার করেন না। তারা যখন রক্ষণাত্মক অবস্থানে থাকেন, যখন তাদের প্রগতিশীল ধর্মতত্ত্ব (যদিও জনপ্রিয়) প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, এবং যদি তারা পালক হন, যখন তাদের চাকরি প্রায় শেষ হওয়ার উপক্রম হয়, কেবলমাত্র তখনই তারা নিজেদেরকে “সংস্কার-পন্থি” বলে দাবী করেন। ধর্মতাত্ত্বিক উদারবাদীরা, “সংস্কার-পন্থি” দাবী করে এমন মণ্ডলীতে এবং সম্প্রদায়ে থাকতে পারেন, তবে তারা এমন পরিচিতির জন্য লজ্জিত, এবং তারা এমন বিশ্বাসে উপনীত হন যে “সংস্কার-পন্থি” হিসেবে পরিচিত হওয়া হলো কারো জন্য বিঘ্নস্বরূপ এবং অন্যদের জন্য কষ্ট-দায়ক। অধিকন্তু, ঐতিহাসিকতা অনুসারে, মণ্ডলীর সাধারণ চিহ্ন হলো – ঈশ্বরের বাক্যের নিরাময় প্রচার, ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে প্রার্থনা, বাপ্তিষ্ম এবং প্রভুর ভোজের আচারানুষ্ঠানের সঠিক ব্যবহার, এবং মণ্ডলীর শাসনের অবিচল অনুশীলন – এমন “সংস্কার-পন্থি” মণ্ডলীগুলোও প্রায়ই সত্য মণ্ডলী নয়। বর্তমানে, মণ্ডলীতে অনেক সাধারণ সদস্য এবং পালক আছেন, যারা ঐতিহ্যগতভাবে সংস্কার-পন্থি এবং প্রোটেস্ট্যান্ট মণ্ডলী এবং সম্প্রদায়, যারা, তাদের মণ্ডলী এবং সম্প্রদায় সমেত, যারা মাত্র কয়েক বছর আগে প্রবর্তীত তাদের সংস্কার-পন্থি বন্ধনগুলো এবং তাদের কনফেশনগুলো পরিত্যাগ করেছেন। 

এই ধারার বিপরীতে, পুলপিটে আমাদের সেই লোকদের সবচে’ বেশী প্রয়োজন যাদের সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহস আছে – তারা এমন মানুষ যারা একসময়ে সাধুগণকে দেয়া বিশ্বাস সস্পর্কে লজ্জিত নন, কিন্তু যারা মুখের কথার পরিসেবা দিয়ে নয়, কিন্তু তাদের সমস্ত জীবন দিয়ে এবং তাদের শক্তি দিয়ে এর জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত। আমাদের পুলপিটে সেই লোকদের প্রয়োজন যারা সত্যের ঘোষণায় সাহসী ও অবিচল এবং যারা একই সময়ে অনুগ্রহশীল এবং করুণাপূর্ণ। আমাদের সেসব লোক দরকার, যারা সময়ে এবং অসময়ে সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্বের সাদামাটা সত্য প্রচার করবে, কারো মুখ বরাবর আঙ্গুল উঁচিয়ে নয় কিন্তু তাদের কাঁধে হাত রেখে। আমাদের সেসব লোক প্রয়োজন যারা সংস্কার-পন্থি কনফেশনগুলোকে নির্ভুলভাবে ভালবাসে কারণ তারা আমাদের ঈশ্বর প্রভুকে, এবং তাঁর অপরিবর্তনীয়, অনুপ্রাণিত, এবং কর্তৃত্বকারী বাক্যকে ভালবাসে। কেবল তখনই পুলপিটে আমাদের এমন লোকেরা আসবে যাদের সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহস আছে এবং গীর্জার আসনে আমাদের এমন লোকেরা থাকবে যারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সংস্কার-পন্থি ধর্মতত্ত্ব ও এর প্রভাব অনুধাবন করতে পারবে, যেন আমাদের সমস্ত অন্তকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে এবং প্রতিবেশীদেরকে নিজের মত করে প্রেম করতে পারি। এটাই হলো ধর্মতত্ত্ব যা ষোড়শ শতাব্দিতে মণ্ডলীকে সংস্কারকৃত করেছিল, এবং এটাই একমাত্র ধর্মতত্ত্ব যা এই একবিংশ শতাব্দিতে সংস্কার এবং জাগরণ নিয়ে আসবে। কেননা আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল প্রগতিবাদী ধর্মতাত্ত্বিক উদারতাবাদের এই সময়ে, আমরা সবচে’ বেশী যে বিষয়ে প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারি, তা হলো আমাদের সংস্কার-পন্থি কনফেশন অনুসারে মূলধারায় থাকা, তথাপি একগুঁয়েমীতা নিয়ে নয়, কিন্তু মণ্ডলীর জন্য এবং হারানো লোকদের জন্য, সমস্ত কিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্য, এবং একমাত্র তাঁরই গৌরবের জন্য সাহসিকতা ও করুণার সাথে। 

ডাঃ বার্ক পার্সনস
ডাঃ বার্ক পার্সনস
ফ্লোরিডারস্থ স্যানফোর্ডের, Saint Andrew’s Chapel-এর সিনিয়র পালক, লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজের প্রধান প্রকাশনা অফিসার, এবং ট্যাবলটক ম্যাগাজিনের সম্পাদক। তিনি Why Do We Have Creeds? পুস্তকের লেখক।