প্রার্থনার স্থান
11-04-2024
যিশু খ্রিষ্ট: ঈশ্বরের মেষশাবক
13-04-2024
প্রার্থনার স্থান
11-04-2024
যিশু খ্রিষ্ট: ঈশ্বরের মেষশাবক
13-04-2024

পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন এর অর্থ কি?

xr:d:DAFXk0WDSFg:25,j:45162075609,t:23011320

আমরা যখন প্রায়শ্চিত্বের প্রাতিনিধিক দিকের কথা বলি, সেক্ষেত্রে পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন: এই দু’টো পারিভাষিক শব্দ বারংবার উঠে আসে। কোন এক বিশেষ গ্রীক শব্দকে ভাষান্তর করার সময় কোন শব্দটি ব্যবহার করা উচিত, সে সম্পর্কে এই শব্দগুলো সকল ধরণের যুক্তি-তর্ককে উসকে দেয়, এবং বাইবেলের কোন কোন ভাষান্তর এই শব্দগুলোর মধ্যে একটিকে ব্যবহার করে, আবার কোন কোনটি অন্যটিও ব্যবহার করে। আমাকে প্রায়ই সন্তুষ্টি-সাধন ও পাপ-মোচনের মধ্যেকার পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। যদিও এই শব্দগুলো বাইবেলে রয়েছে, তবুও সমস্যা হলো, আমরা আমাদের দৈনন্দিন কথা-বার্তার শব্দচয়নের অংশ হিসেবে সেগুলোকে ব্যবহার করি না, তাই সেগুলো প্রকৃত পক্ষে শাস্ত্রে কি অর্থ তুলে ধরছে, সেই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। এই শব্দগুলো সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য-সূত্রের অভাব আছে।

পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন

আসুন এই শব্দগুলো কি বুঝায় তা নিয়ে চিন্তা করি, প্রথমে, পাপ-মোচন শব্দটি দিয়ে শুরু করি। পাপ-মোচন শব্দটির ইংরেজী expiation শব্দটি শুরু হয়েছে উপসর্গ ‘ex’ দিয়ে যার মানে হলো “থেকে” বা “হতে”, তাই এই পাপ-মোচন শব্দটির ব্যবহার হচ্ছে “কোন কিছু দূর করা” অথবা “কোন কিছু নিয়ে নেয়া” অর্থে। বাইবেলের পরিভাষায়, এটির ব্যবহার হচ্ছে শাস্তির মূল্য পরিশোধ করা অথবা প্রায়শ্চিত্বের নৈবেদ্যের মাধ্যমে দোষ নিয়ে নেয়া অর্থে। পক্ষান্তরে, সন্তুষ্টি-সাধন হচ্ছে পাপ-মোচনের উদ্দেশ্য। সন্তুষ্টি-সাধন শব্দটির ইংরেজী শব্দ  “propitiation” শব্দের উপসর্গ ‘pro’ মানে “জন্য” বা “পক্ষ,” তাই সন্তুষ্টি-সাধন ঈশ্বরের মনোভাবে একটি পরিবর্তন সাধনের সাথে সম্পর্কিত, যেন তিনি আমাদের সাথে শত্রুতা থেকে সরে এসে আমাদের পক্ষ হচ্ছেন। সন্তুষ্টি-সাধনের প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে, আমরা তাঁর সাথে সহভাগীতা ও আনুকূল্যের অবস্থানে পুনঃস্থাপিত হই।

নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, সন্তুষ্টি-সাধন ঈশ্বরকে শান্ত করার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমরা জানি সামরিক ও রাজনৈতিক বিরোধগুলোতে, শান্ত করা শব্দটি কিভাবে ব্যবহৃত হয়। আমরা শান্ত করার তথাকথিত রাজনীতির বিষয় চিন্তা করতে পারি, সেক্ষেত্রে দর্শণ হলো, আপনার বিপক্ষে যদি একজন বেপরোয়া বিশ্ব বিজয়ী ব্যক্তি হারতে থাকেন এবং খড়গের ঝনঝনানি শুনাতে থাকেন, তবে আপনি তার ঝটিকা অভিযানের ক্রোধের ঝুঁকি এড়াতে তাকে আপনি চেকোস্লোভাকিয়া থেকে স্যুদেতেনল্যান্ড অথবা এমনি এক টুকরো ভুখন্ড দিয়ে দেন। আপনি এমন কিছু দিয়ে তার ক্রোধ প্রশমিত করার চেষ্টা করেন যা তাকে সন্তুষ্ট করে, যাতে তিনি আর আপনার দেশে না আসেন এবং আপনাকে কচুকাটা না করেন। এটা প্রশমিতকরণের এক অনীশ্বরিক প্রকাশ। কিন্তু আপনি যদি রাগান্বিত হয়ে থাকেন অথবা আপনার মর্যাদাহানি হয়েছে বলে মনে করেন, এবং আমি আপনার রাগ প্রশমিত করি, অথবা আপনাকে সন্তুষ্ট করি, তাহলে আমি আপনার আনুকূল্যে পুনঃস্থাপিত হই এবং সমস্যা দূরীকৃত হয়।

কোন কোন সময়ে, একই গ্রীক শব্দকে পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন এ উভয় শব্দ দ্বারা ভাষান্তরীত করা হয়েছে। কিন্তু পরিভাষাদ্বয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পাপ-মোচন সে কাজ যার ফলে আমাদের প্রতি ঈশ্বরের মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। খ্রীষ্ট ক্রুশে তা-ই করেছেন, এবং পাপ-মোচন বিষয়ক খ্রীষ্টের কাজের ফল হচ্ছে সন্তুষ্টি-সাধন – ঈশ্বরের রাগ প্রশমিত হয়েছে। এখানে যে তফাৎ রয়েছে, তা যে মুক্তির-মূল্য প্রদান হয় এবং যিনি মুক্তির-মূল্য গ্রহণ করেন তার মনোভাবের মাঝেকার তফাতের মত একই।

খ্রীষ্টের কাজ ছিল প্রশমনের কাজ

পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন একসঙ্গে প্রশমনের কাজ সম্পন্ন করে। ঈশ্বরের ক্রোধকে প্রশমিত করার জন্য খ্রীষ্ট ক্রুশের উপর তাঁর কাজ সাধন করেছেন। ঈশ্বরের ক্রোধ প্রশমিত করার এই ধারণা আধুনিক ধর্মতত্ত্ববিদদের ক্রোধ প্রশমিত করার ক্ষেত্রে খুব কমই কাজ করতে পেরেছে। বস্তুত, ঈশ্বরের ক্রোধ প্রশমিত করা সম্পর্কিত এই সামগ্রিক ধারণা নিয়ে তারা খুবই ক্রোধান্বিত হন। তারা মনে করেন, ঈশ্বরকে প্রশমিত করার ধারণা, অর্থাৎ তাঁকে সন্তুষ্ট বা তুষ্ট করার জন্য আমাদের কিছু করা উচিত এমন ধারণা তাঁর মর্যাদাকে খাটো করা হয়। ঈশ্বরের ক্রোধ বুঝার ক্ষেত্রে আমাদেরকে খুবই সতর্ক হতে হবে, কিন্তু এখানে আমি আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে ঈশ্বরের ক্রোধ প্রশমিত করার ধারণাটিকে ধর্মতত্ত্বের পরিধি বহির্ভূত, অসম্পর্কিত কোন বিষয় হিসেবে ধরা হয় না, কিন্তু পরিত্রাণের সারবস্তু হিসেবেই ধরা হয়।

পরিত্রাণ কি?

আচ্ছা, আমাকে একটা মৌলিক প্রশ্ন করতে দিন: ’পরিত্রাণ’ পরিভাষাটি কি বুঝায়? খুব দ্রুত ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করলে আপনার মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে, কারণ বাইবেলে পরিত্রাণ শব্দটি প্রায়ই সত্তর রকমের ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যদি কাউকে যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় থেকে উদ্ধার করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সে পরিত্রাণের অভিজ্ঞতা লাভ করে। যদি কেউ জীবন সংশয়মূলক অসুস্থতা থেকে রক্ষা পায়, সেই ব্যক্তি পরিত্রাণের অভিজ্ঞতা লাভ করে। যদি কারোর চারা গাছগুলোকে শুকিয়ে যাওয়া অবস্থা থেকে সজীবতায় নিয়ে আসা হয়, সেগুলো রক্ষা পেল। বাইবেলের ভাষা এরকমই এবং এটা আমাদের নিজেদের ভাষা থেকে আসলে ভিন্ন কিছু নয়। আমরা অর্থ সঞ্চয় করি। একজন বক্সার ঘন্টা-ধ্বনি দ্বারা রক্ষা পায়, অর্থাৎ সে নক-আউট হয়ে লড়াইয়ে হেরে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়, এই রক্ষা পাওয়ার মানে এই নয় যে তাকে ঈশ্বরের অনন্তকালীণ রাজ্যে বহন করে নেয়া হয়। সংক্ষেপে, কোন পরিষ্কার এবং উপস্থিত বিপদ থেকে উদ্ধার লাভের যেকোন অভিজ্ঞতাকে কোন না কোন অর্থে পরিত্রাণ বলা যেতে পারে।

যখন আমরা বাইবেলের দিক থেকে পরিত্রাণ সমন্ধে বলি, তখন আমরা কিসে থেকে চুড়ান্তভাবে রক্ষা পেয়েছি, তা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। প্রেরিত পৌল আমাদের জন্য ১ থিষলনীকীয় ১:১০ পদে ঠিক তেমনটিই করেছেন, যেখানে তিনি বলেন, যীশু, “আগামী ক্রোধ হতে আমাদের উদ্ধারকর্তা।” চুড়ান্তভাবে, আমাদেরকে ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা করার জন্য যীশু মৃত্যুবরণ করেছেন। সহজ করে বলতে হয়, এটা না বুঝে আমরা নাসরতীয় যীশুর শিক্ষা এবং প্রচার বুঝতে পারি না, কেননা তিনি অবিরতভাবে লোকদেরকে সতর্ক করেছেন যে পুরো জগৎ একদিন স্বর্গীয় বিচারের অধীনে আসবে। সে বিচার সম্পর্কে তাঁর কয়েকটি সতর্কবাণী এখানে তুলে ধরা হল: “কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ আপন ভ্রাতার প্রতি ক্রোধ করে, সে বিচারের দায়ে পড়বে” (মথি ৫:২২); “আর আমি তোমাদেরকে বলছি, মনুষ্যেরা যত অনর্থক কথা বলে, বিচার-দিনে সেই সকলের হিসেব দিতে হবে ” (মথি ১২:৩৬); এবং “নীনবীর লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সংগে দাঁড়িয়ে এদেরকে দোষী করবে, কেননা তারা যোনার প্রচারে মন ফিরিয়েছিল, আর দেখ, যোনা হতে মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন” (মথি ১২:৪১)। যীশুর ধর্মতত্ত্ব ছিল সংকট সমাধান সম্পর্কিত ধর্মতত্ত্ব। ’সংকট’ শব্দের জন্য গ্রীকে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ হলো “বিচার।” এবং যীশু যে সংকটের বিষয় প্রচার করেছিলেন, তা ছিল জগতের আসন্ন বিচারের কথা, যে সময়ে ঈশ্বর অমুক্তিপ্রাপ্ত, অনীশ্বর, ও অনুশোচনাবিহীন লোকদের বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ ঢেলে দিতে যাচ্ছেন্। ক্রোধের সেই বর্ষণ থেকে পলায়নের একমাত্র উপায় হলো খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্ব দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়া।

অতএব, ক্রুশের উপরে খ্রীষ্টের সর্বোচ্চ অর্জন হলো যে, তিনি ঈশ্বরের ক্রোধকে প্রশমিত করেছেন, আমরা যদি খ্রীষ্টের উৎসর্গ-বলি দ্বারা আচ্ছাদিত না হতাম সেই ক্রোধ আমাদের বিরুদ্ধে প্রজ্বলিত হতো। তাই কেউ যদি প্রশমিতকরণের বিরুদ্ধে অথবা ঈশ্বরের ক্রোধকে সন্তুষ্ট করার ধারণার বিরুদ্ধে তর্কাতর্কি করে, সর্তক হউন, কেননা এতে সুসমাচার বিফল হয়ে পড়ে। সুসমাচারের মূল-সার এটিই – অর্থাৎ যেসব লোক প্রায়শ্চিত্বের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়, আমরা সর্বোচ্চ বিপদে পড়ার আশংকায় থাকা অন্য যে কোন কারো মতই তা থেকে মুক্তি-প্রাপ্ত হয়েছি। পবিত্র ঈশ্বর যিনি ক্রোধে-পূর্ণ, তাঁর হাতে পতিত হওয়া খুবই ভয়ংকর বিষয় হবে। কিন্তু যাদের পাপের দাম পরিশোধ করা হয়েছে, তাদের জন্য কোন ক্রোধ নেই। এটাই হলো পরিত্রাণ।


এই প্রবন্ধটি মূলতঃ লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজ ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল
আর. সি. স্প্রৌল
আর. সি. স্প্রৌল
ডঃ আর. সি. স্পৌল লিগোনিয়ার মিনিস্ট্রিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা, ফ্লোরিডাস্থ স্যানফোর্ড-এ সেন্ট এ্যান্ড্রুস চ্যাপেল -এর প্রতিষ্ঠাতা পালক, রিফরমেশন বাইবেল কলেজের প্রথম সভাপতি, এবং টেবলটক ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তার রেডিও প্রোগ্রাম, রিনিউইং ইয়োর মাইন্ড, আজও প্রতিদিন সমস্ত পৃথিবী জুড়ে, শত-শত রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার হয়ে থাকে এবং সেগুলো অনলাইনে শোনারও সুবিধা রয়েছে। একশতেরও বেশি পুস্তক তিনি লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্যা হোলিনেস অফ গড, চোজেন বাই গড, এবং এভরিওয়ানস্‌ এ্যা থিওলজিয়্যান। শাস্ত্রের নির্ভূলতার পক্ষ-সমর্থন করার ক্ষেত্রে এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপর দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে ঈশ্বরের লোকদের স্থির থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ব জুড়ে তিনি জনপ্রিয়।