পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন এর অর্থ কি?
13-04-2024প্রার্থনার স্থান
খ্রিষ্টীয় জীবনের লক্ষ্য কি? সেটি হচ্ছে খ্রিষ্টের প্রতি বাধ্যতা থেকে সৃষ্ট ঈশ্বর-ভক্তি। বাধ্যতা খ্রিষ্টীয় অভিজ্ঞতার ধন-ভাণ্ডারকে উন্মুক্ত করে। প্রার্থনা বাধ্যতার আকাঙ্খা সৃষ্টি করতে যথার্থ “মানস-পটে” হৃদয়কে নিয়ে গিয়ে, বাধ্যতা উৎসারিত করে ও লালন করে।
অবশ্যই, জ্ঞানও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা ছাড়া, ঈশ্বরের আবশ্যকীয়তা আমরা জানতে পারি না। তথাপি, যদি না আমরা প্রার্থনায় ঈশ্বরের সাথে মিলিত হই, এই জ্ঞান ও সত্যতা বিমূর্ত অবস্থায় থাকবে। পবিত্র আত্মাই আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেন, অনুপ্রাণিত করেন, এবং আলোকিত করেন। তিনি ঈশ্বরের বাক্যকে মধ্যস্থ হিসেবে ব্যবহার করেন এবং প্রার্থনায় পিতার কাছে সাড়া দানে আমাদেরকে সাহায্য করেন।
খ্রিষ্টানদের জীবনে প্রার্থনার এক প্রাণবন্ত স্থান রয়েছে। প্রথমত, এটা পরিত্রাণের জন্য পরম এক পূর্বাবশ্যক। কিছু কিছু লোক শুনতে পায় না; তথাপি যদিও তারা বধির, তারা পরিত্রাণ পেতে পারে। কেউ বা দেখতে পায় না; তথাপি যদিও তারা অন্ধ, তারা পরিত্রাণ পেতে পারে। যীশু খ্রিষ্টের প্রায়শ্চিত্ত্বজনক মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিত্রাণ – সুসংবাদ বিষয়ক জ্ঞান, কোন না কোন উৎস থেকে আসবে, কিন্তু চুড়ান্ত বিশ্লেষণে, একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই বিনম্রভাবে ঈশ্বরের কাছে পরিত্রাণের জন্য যাচ্ঞা করতে হবে। দুষ্টদের একটি প্রার্থনা ঈশ্বর শুনবেন বলে বলেছেন, তা হচ্ছে পরিত্রাণের প্রার্থনা।
যারা স্বর্গে থাকবে তাদের মধ্যে কি মিল আছে? বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল আছে। তাদের সকলেই খ্রিষ্টের প্রায়শ্চিত্ত্বে তাদের বিশ্বাস রাখার মধ্য দিয়ে নির্দোষিতা-গণিত হয়েছে। তারা সকলেই ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। এবং তাদের সকলেই পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করেছেন। প্রার্থনাবিহীন থাকা মানে হলো ঈশ্বর, খ্রিষ্ট, পবিত্র আত্মা বিহীন থাকা, এবং স্বর্গের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা বিহীন থাকা।
দ্বিতীয়ত, একজন খ্রিষ্টানের নিশ্চিত এক চিহ্ন হলো তার প্রার্থনার জীবন। একজন প্রার্থনা করতে পারে, তবে খ্রিষ্টান নাও হতে পারে, কিন্তু এমন খ্রিষ্টান কেউ হতে পারে না, যে প্রার্থনা করবে না। রোমীয় ৮:১৫ পদ আমাদেরকে বলে, যে আত্মিক দত্তকপুত্রত্ব আমাদেরকে ঈশ্বরের সন্তানে পরিণত করেছে, তা আমাদেরকে তাঁকে “আব্বা! পিতা!” বলে স্বরবে ডাকার জন্য সাহায্য করে। জীবনের জন্য যেমন নিঃশ্বাস, খ্রিষ্টানদের কাছে প্রার্থনা তেমনি, তথাপি খ্রিষ্টানদের কর্তব্যসমূহের মধ্যে কোন কিছুই প্রার্থনার মত এত বেশি অবহেলিত নয়।
প্রার্থনা, অন্তত ব্যক্তিগত প্রার্থনা, মিথ্যা অভিপ্রায় নিয়ে করা খুবই কঠিন। একজন হয়তো মিথ্যা অভিপ্রায় বশত প্রচার করতে পারে, যেমন ভ্রান্ত ভাববাদীরা করেন; কেউ বা মিথ্যা অভিপ্রায় থেকে খ্রিষ্টীয় কার্যক্রমে জড়িত হতে পারে। ধর্মের অনেক বাহ্যিক বিষয় মিথ্যা অভিপ্রায় থেকে করা যেতে পারে, কিন্তু এটা একেবারেই অসম্ভব যে, কেউ কোন অনুপযুক্ত অভিপ্রায় বশত ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। মথি ৭ অধ্যায় আমাদেরকে বলে যে, “শেষ কালে,” অনেকেই বিচারের সামনে দাঁড়াবে এবং খ্রিষ্টকে বলবে যে তারা তাঁর নামে কত মহান ও মহৎ কাজ করেছে, কিন্তু তাঁর জবাব হবে, তিনি তাদেরকে চেনেন না।
তাই, প্রার্থনা করতে, আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এমনকি হুকুম করা হয়েছে। প্রার্থনা সুযোগ ও কর্তব্য উভয়ই, এবং যে কোন কর্তব্য পরিশ্রম-সাধ্য হতে পারে। প্রার্থনা, খ্রিষ্ট বিশ্বাসীর বৃদ্ধির অন্য যে কোন উপায়ের মতোই, কাজকে আবশ্যক করে। এক অর্থে, প্রার্থনা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক। যদিও আমাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সহভাগীতা ও মিলনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল, পতনের পরিণতি আমাদের অধিকাংশকেই প্রার্থনার মতো গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয়ে অলস ও উদাসীন করে ফেলেছে। নূতন জন্ম ঈশ্বরের সাথে মিলনে নতুন এক আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে, কিন্তু পাপ পবিত্র আত্মাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
আমরা এই সত্যতা থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি যে, ঈশ্বর আমাদের অন্তঃকরণ জানেন এবং আমাদের ওষ্ঠাধর থেকে প্রবহমান কথাগুলোর চেয়েও আমাদের অব্যক্ত আবেদনগুলো বেশি শুনেন। আমরা যখনই আমাদের প্রাণের গভীর অনুভুতি ও আবেগ প্রকাশ করতে অক্ষম হই, অথবা যখনই আমাদের কিসের জন্য প্রার্থনা করতে হবে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার নই, পবিত্র আত্মা আমাদের হয়ে মধ্যস্থতা করেন। রোমীয় ৮: ২৬-২৭ পদ মতে,
“আত্মাও আমাদের দুর্বলতায় সাহায্য করেন; কেননা উচিত মতে কি প্রার্থনা করতে হয়, তা আমরা জানি না, কিন্তু আত্মা আপনি অব্যক্ত আর্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করেন। আর যিনি হৃদয় সকলের অনুসন্ধান করেন, তিনি জানেন, আত্মার ভাব কি, কারণ ইনি পবিত্রগণের পক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই অনুরোধ করেন।” যখন আমরা জানি না যে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রার্থনা করতে হবে অথবা কি বিষয়ে প্রার্থনা করতে হবে, পবিত্র আত্মা আমাদেরকে সহায়তা করেন। শাস্ত্রের এ অংশ থেকে আমাদের এ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, যদি আমরা ভুলভাবে প্রার্থনা করি, সেগুলোকে পবিত্র আত্মা পিতার সম্মুখে পেশ করার আগে, তিনি আমাদের প্রার্থনার মধ্যে ভুলগুলোকে সংশোধন করেন, কেননা ২৭ পদ আমাদেরকে বলে যে, পবিত্র আত্না “পবিত্রগণের পক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই অনুরোধ করেন।”
যদি পবিত্রতার আসলেই নিজের কোন রহস্য থাকে, তবে প্রার্থনাই পবিত্রতার সেই রহস্য। যদি আমরা মণ্ডলীর মহান সাধুদের জীবন পরীক্ষা করি, আমরা দেখতে পাব যে তারা প্রার্থনার মহান লোক ছিলেন। জন ওয়েসলি একবার মন্তব্য করে বলেছিলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে চার ঘন্টা প্রার্থনায় সময় কাটাননি এমন পরিচর্যাকারীর কথা তিনি চিন্তাও করতে পারেন না। লুথার বলেছেন যে, তিনি প্রতিদিন এক ঘন্টা করে প্রার্থনা করতেন, যদি না তিনি কোন বিশেষ ব্যস্ততম দিনের সম্মুখীন হতেন। অন্যান্য সময়ে তিনি দুই ঘন্টা করে প্রার্থনা করতেন।
প্রার্থনাকে অবহেলা খ্রিষ্টীয় জীবনে স্থবিরতার একটি বড় কারণ। লুক ২২:৩৯-৬২ পদে পিতরের উদাহরণ বিবেচনা করুন। যীশু তাঁর রীতি অনুসারে প্রার্থনার জন্য জৈতুন পর্বতে গেলেন এবং তাঁর শিষ্যদেরকে বললেন, “প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়।” প্রার্থনার পরিবর্তে শিষ্যগণ ঘুমিয়ে পড়লেন। এর পর পিতর আরেকটি কাজ করে বসলেন, তা হলো তিনি রোমান সৈন্যের বিরুদ্ধে খড়গ ধারণ করলেন; পরে তিনি খ্রিষ্টকে অস্বীকার করেছিলেন। পিতর প্রার্থনা করেন নি, ফলে তিনি প্রলোভনে পতিত হন। পিতরের ক্ষেত্রে যা সত্য, তা আমাদের সকলের জন্যও সত্য: আমরা সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ্যে পতিত হওয়ার আগে আমরা ব্যক্তিগতভাবে পতিত হই।
প্রার্থনার কি কোন উপযুক্ত ও অনুপযুক্ত সময় আছে? যিশাইয় ৫০:৪ পদ সময় হিসেবে ভোর বেলা সম্পর্কে তুলে ধরে যখন ঈশ্বর প্রতিদিনকার প্রার্থনা করার আকাঙ্খা যোগান এবং ঈশ্বরে নতুনীকৃত আস্থা সমন্ধে তুলে ধরে। কিন্তু আবার অন্যান্য শাস্ত্রাংশও আছে যেগুলো দিনের সকল সময়কেই প্রার্থনার সময় বলে উল্লেখ করে। দিনের কোন এক সময়কে অন্য সময় থেকে বেশী পবিত্র করে আলাদা করা হয় নি। যীশু ভোর বেলায়, দিনের বেলায়, এবং কোন কোন সময় সারা রাত ধরে প্রার্থনা করেছেন। এমন প্রমাণ আছে যেখানে দেখা যায় যে, তিনি প্রার্থনার জন্য একটি সময় আলাদা করে রাখতেন; তথাপিও, পিতার সাথে যীশুর যে সম্পর্ক ছিল তা বিবেচনা করলে, আমরা জানি যে তাদের মধ্যেকার যোগাযোগ কখনই বন্ধ হয় নি।
১ থিষলনীকিয় ৫:১৭ পদ আমাদেরকে অবিরত প্রার্থনা করার জন্য আদেশ করে। এর অর্থ হলো, আমাদেরকে আমাদের পিতার সাথে অবিরত যোগাযোগের অবস্থানে থাকতে হবে।
এই অনুচ্ছেদটি আর. সি. স্প্রৌল কর্তৃক রচিত “প্রার্থনা কি কোন বিষয়কে পরিবর্তন করে“ নামক পুস্তিকায় পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল।