নির্দোষিতার কার্য-সহায়ক কারণ
12-09-2024সকল প্রোটেস্ট্যান্ট “ধর্মবিরুদ্ধমত” এর মধ্যে সবচে’ বড় কোনটি?
19-09-2024ঈশ্বর সার্বভৌম, তাহলে মানুষ কিভাবে স্বাধীন?
ঈশ্বর সর্বোচ্চ স্বাধীন; অর্থাৎ তাঁর স্বাধীনতা অপরিসীম। তিনি সার্বভৌম। তাঁর সার্বভৌমত্ব নিয়ে সচরাচর সবচে’ বেশী অভিযোগ হলো, যদি ঈশ্বর সত্যি সত্যি সার্বভৌম হয়ে থাকেন, তবে মানুষ স্বাধীন হতে পারে না। আমাদের মানবীয় অবস্থাকে বর্ণনা করার জন্য শাস্ত্র দু’টো ভিন্ন উপায়ে স্বাধীনতা পরিভাষাটি ব্যবহার করেন: জোর করে বাধ্য করা থেকে স্বাধীনতা, এর মধ্যদিয়ে মানুষ কোন রকম জোর-জবরদস্তি ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং নৈতিক স্বাধীনতা, যা আমরা পতনের সময়ে হারিয়েছি, এর ফলে আমরা নিজেদেরকে মাংসিক অভিলাষের দাসে ফেলে দিয়েছি। মানবতাবাদীরা বিশ্বাস করেন যে মানুষ কেবল যে জোর-জবরদস্তি ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন নয়, কিন্তু সে মন্দের প্রতি কোন স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ছাড়াও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। খ্রীষ্টান হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই মানবীয় স্বাধীনতার বিষয়ে এই মানবতাবাদী অথবা পৌত্তলিক মতের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
খ্রীষ্টিয় মত হলো, ঈশ্বর আমাদেরকে ইচ্ছাশক্তি দিয়ে, বাছাই করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেন। আমরা ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন প্রাণী। কিন্তু সৃষ্টিতে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল তা ছিল সীমাবদ্ধ। আমাদের স্বাধীনতাকে যা শেষমেষ সীমাবদ্ধ করে তা হলো ঈশ্বরের স্বাধীনতা। এখানেই আমরা স্বর্গীয় সর্বভৌমত্ব ও মানবীয় স্বাধীনতার মাঝেকার সংঘাতে প্রবেশ করি। কেউ কেউ বলেন যে মানুষের স্বাধীনতা দ্বারা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সীমাবদ্ধ। যদি তাই হয়, তবে, মানুষই সার্বভৌম, ঈশ্বর নন। সংস্কার-পন্থি বিশ্বাস শিক্ষা দেয় যে, মানবীয় স্বাধীনতা বাস্তব, কিন্তু ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব দ্বারা সীমাবদ্ধ। আমরা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে ঈশ্বরের সার্বভৌম সিদ্ধান্তকে নাকচ করতে পারি না, কারণ ঈশ্বরের স্বাধীনতা আমাদের স্বাধীনতার চেয়ে অনেক বড়।
মানুষের পারিবারিক সম্পর্ক একটি সাদৃশ্যানুমান দেয়। পিতামাতারা শিশুর উপর কর্তৃত্ব চর্চা করে। শিশুর স্বাধীনতা আছে, কিন্তু পিতামাতার আরও বেশী আছে। শিশুর স্বাধীনতা পিতামাতার স্বাধীনতাকে এমনভাবে সীমাবদ্ধ করে না যেখানে পিতামাতার স্বাধীনতা শিশুর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে। আমরা যখন ঈশ্বরের গুণাবলীর বিষয়ে কথা বলি, তখন আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে ঈশ্বর সর্বোচ্চ স্বাধীন।
যখন আমরা বলি, ঈশ্বর হলেন সার্বভৌম, তখন আমরা ঈশ্বরের স্বাধীনতার বিষয়ে বলি, যদিও আমরা এমন চিন্তা করতে প্রবণ যে, সার্বভৌমত্ব মানে স্বাধীনতা থেকে একেবারে ভিন্ন কিছু। ঈশ্বর ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন সত্ত্বা; তাঁর ইচ্ছা আছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। যথন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এবং তাঁর ইচ্ছাশক্তির চর্চা করেন, তখন তিনি সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব হিসেবেই তা সার্বভৌমভাবেই করেন। তাঁর স্বাধীনতা সর্বোচ্চ স্বাধীন। কেবলমাত্র তাঁরই সর্বোচ্চ স্বশাসন রয়েছে; তিনিই তাঁর নিজের কাছে আইন।
মানুষ স্বায়ত্বশাসন খোঁজে, অপরিসীম স্বাধীনতা অন্বেষণ করে, যেন সে কারো কাছে দায়বদ্ধ না থাকে। প্রকৃত পক্ষে, এটাই পতনের সময় ঘটেছিল। শয়তান আদম এবং হবাকে স্বায়ত্বশাসনের দিকে প্রলুব্ধ করেছিল, ঈশ্বরের মত হওয়ার জন্য, যেন কোন পরিণাম ভোগ না করে তারা যা চায় তাই করতে পারে। এদন বাগানে শয়তান মানুষকে নরহত্যার অপরাধ থেকে, ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ থাকা থেকে, স্বাধীন করতে এক মুক্তির আন্দোলন তুলে ধরছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই স্বশাসন আছে।
এই উদ্ধৃতাংশটুকু আর. সি. স্প্রৌল রচিত Truths We Confess থেকে নেয়া হয়েছে। ট্রুথস উই কনফেস বইটি এখন হুবহু পুনঃ-সংশোধীত এবং এক খণ্ডে পাওয়া যাচ্ছে, ডঃ স্প্রৌল পাঠকের কাছে এ উল্লেখযোগ্য কনফেশনে তুলে ধরেন, এর আধুনিক জীবনে এর অন্তদৃষ্টি ও প্রয়োগ ব্যাখ্যা করেন। আজই শক্ত-মলাটের পুস্তকের জন্য অর্ডার করুন।