ঈশ্বর সার্বভৌম, তাহলে মানুষ কিভাবে স্বাধীন?
17-09-2024সকল প্রোটেস্ট্যান্ট “ধর্মবিরুদ্ধমত” এর মধ্যে সবচে’ বড় কোনটি?
আসুন আমরা মণ্ডলীর ইতিহাসের পরীক্ষা থেকে একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। কার্ডিন্যাল রবার্ট বিলারমিনের (১৫৪২-১৬২১) মত ব্যক্তিকে হালকাভাবে নেয়া যায় না। তিনি অস্টম পোপ ক্ল্যামেন্টের ব্যক্তিগত ধর্মতত্ত্ববিদ ছিলেন এবং তিনি ষোড়শ শতাব্দিতে রোমান ক্যাথলিকবাদের মধ্যে পাল্টা-সংস্কার আন্দোলনের সবচে’ উপযুক্ত লোকদের একজন। এক উপলক্ষ্যে, তিনি লিখেছেন: “সকল প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মবিরুদ্ধমতের সবচে’ বড়টি হচ্ছে ——————।” বিলারমিনের উক্তিটি শেষ করুন, ব্যাখ্যা করুন এবং আলোচনা করুন।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন? সকল প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মবিরুদ্ধমতের সবচে’ বড় কোনটি? হতে পারে বিশ্বাস হেতুই নির্দোষিতা? অথবা হতে পারে শুধুমাত্র শাস্ত্র, অথবা সংস্কার সংকেতশব্দের আরেকটি মতবাদ?
এই উত্তরগুলো যৌক্তিক অর্থ তৈরী করে। কিন্তু এগুলোর কোনটাই বিলারমিনের বাক্যকে সম্পূর্ণ করে না। তিনি যা লিখেছেন তা হলো: “সকল প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মবিরুদ্ধমতের সবচে’ বড়টি হলো নিশ্চয়তা।”
এক মুহূর্তের প্রতিফলন এর কারণ ব্যাখ্যা করে। নির্দোষিতা যদি শুধুমাত্র বিশ্বাস হেতুই না হয়ে থাকে, শুধুমাত্র খ্রীষ্টেতে, শুধুমাত্র অনুগ্রহে না হয় – যদি বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ করার জন্য কাজের প্রয়োজন হয়ে থাকে; যদি খ্রীষ্টের কাজের কোন না কোনভাবে পুনরাবৃত্তি হয়; যদি অনুগ্রহ স্বাধীন ও সার্বভৌম না হয়ে থাকে, তবে চুড়ান্ত নির্দোষিতা আমাদের পেতে হলে, কোন কিছু সবসময় বারবার করতে হবে, “যোগ” করতে হবে। এটি সত্যিই একটা সমস্যা। যদি চুড়ান্ত নির্দোষিতা আমাদের সম্পূর্ণ করতে হবে এমন কোন কিছুর উপরে নির্ভরশীল হয়, তাহলে পরিত্রাণের নিশ্চয়তা উপভোগ করা কখনই সম্ভব নয়। কেননা তখন, ধর্মতাত্ত্বিকভাবে, চুড়ান্ত নির্দোষিতা শর্তসাপেক্ষে সত্য ও অনিশ্চিত হবে, এবং এক্ষেত্রে কারোর পক্ষেই (বিশেষ প্রত্যাদেশ ছাড়া, রোম যেমন মত দিয়েছে) পরিত্রাণ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব। কিন্তু যদি খ্রীষ্ট সমস্ত কিছুই করে থাকেন, যদি নির্দোষিতা অনুগ্রহ দ্বারা হয়, কোন প্রকার কাজের অবদান ছাড়াই হয়ে থাকে; এটা রিক্ত হস্তে বিশ্বাসের দ্বারা গৃহীত হয়ে থাকে – সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য নিশ্চয়তা, এমন কি, “সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা” সম্ভব।
আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, যদি বিলারমিন পূর্ণ, বিনামূল্যে, অশৃঙ্খলিত অনুগ্রহকে বিপদজনক বলে চিন্তা করেন! আবার এতেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, সংস্কারকগণ ইব্রীয়দের প্রতি পত্রকে ভালবেসেছিলেন।
এই কারণে, ইব্রীয় পুস্তকের লেখক খ্রীষ্টের কাজের বিষয়ে তার ব্যাখ্যার চুড়ান্ত পর্বে শ্বাস নেওয়ার জন্য থেমেছিলেন (ইব্রীয় ১০:১৮), পরে, তিনি পৌলের-মত করে “অতএব” দিয়ে তার যুক্তি চালিয়ে যান (ইব্রীয় ১০:১৯)। পরবর্তীতে তিনি আমাদেরকে বিনতি করেন “যেন আমরা সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তায় ……….. উপস্থিত হই” (ইব্রীয় ১০:২২)। তার এই “অতএব” ব্যবহারের যৌক্তিক শক্তি দেখার জন্য আমাদেরকে সমস্ত পত্রটি পুনরায় পড়ার দরকার পড়ে না। খ্রীষ্ট আমাদের মহাযাজক; আমাদের হৃদয় প্রোক্ষণ পূর্বক মন্দ হইতে মুক্ত, এবং শুচি জলে স্নাত দেহ বিশিষ্ট হয়েছে (২২ পদ)।
খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য সকলের-জন্য-একবার বলী হলেন, এবং উত্থাপিত হয়েছেন এবং আমাদের প্রতিনিধিত্বকারী যাজক হিসেবে এক অবিনাশী জীবনের শক্তিতে যথার্থ প্রতিপাদ্য হয়েছেন। তাঁতে বিশ্বাস হেতু, তিনি যেমন ধার্মিক, আমরাও তেমনি ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে, ধার্মিক পরিগণিত হয়েছি। কেননা আমরা তাঁর ধার্মিকতায় নির্দোষ-গণিত হয়েছি, তাঁর নির্দোষিতা শুধুমাত্র আমাদের! এবং আমরা এই নির্দোষিতা আর হারাতে পারি না যেমন তিনি স্বর্গ থেকে পতিত হতে পারেন না। এজন্য খ্রীষ্ট যা করেছেন তার চেয়ে আমাদের নির্দোষিতার জন্য আর কিছু সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই।
এ ধারণাটা মনে রেখে, লেখক বলেন, “কারণ যারা পরিত্রীকৃত হয়, তাদেরকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করেছেন ” (ইব্রীয় ১০:১৪)। যে কারণে আমরা পূর্ণ নিশ্চয়তায় ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াতে পারি, তা হলো এখন আমরা আমাদের “হৃদয় প্রোক্ষণ পূর্বক মন্দ হতে মুক্ত এবং দেহ শুচি জলে স্নাত” হিসেবে অভিজ্ঞতা লাভ করি (ইব্রীয় ১০:২২)।
কার্ডিন্যাল বিলারমিনের রোম জবাব দিয়েছে, “আহ, এটা শিক্ষা দিন আর যারা তা বিশ্বাস করবে, তারা যে কোন কিছু করার অনুমতি পেয়ে যাবে এবং নীতিশাস্ত্রবিরোধীতায় বাস করবে।” কিন্তু এর পরিবর্তে ইব্রীয় পুস্তকের যুক্তির কথা শুনুন। এই নিশ্চয়তা উপভোগ করা চারটি বিষয়ের দিকে চালিত করে: প্রথমত, আমাদের আশা হিসেবে শুধুমাত্র যীশু খ্রীষ্টে আমাদের বিশ্বাসের স্বীকারোক্তির অবিচল বিশ্বস্ততা (২৩ পদ); আমরা কিভাবে পরষ্পরকে “প্রেম ও সৎকাজে” উৎসাহিত করতে পারি তার একটি যত্নশীল বিবেচনা (২৪ পদ); তৃতীয়ত, উপাসনা এবং আমাদের সহভাগিতার প্রত্যেকটি দিকে অন্যান্য খ্রীষ্টানদের সাথে চলমান ঐক্যের সম্পর্ক (২৫ পদ); চতুর্থত, একটি জীবন যেখানে আমরা একজন আরেকজনকে খ্রীষ্টের দিকে তাকাতে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে শিক্ষা দিই, যেহেতু তাঁর ফিরে আসার দিন সন্নিকট হয়ে আসছে (২৫খ পদ)।
ভাল গাছেই ভাল ফল ধরে, ভাল গাছে মন্দ ফল ধরে না। আর কাজের কারণে পরিত্রাণ লাভ করি নি; আমরা ভাল কাজ করার জন্যই পরিত্রাণ লাভ করেছি। বন্তুত, আমরা কাজে ঈশ্বরের সহকর্মী (ইফিষীয় ২:৯-১০)! এভাবে, নৈতিক ও আত্মিক উদাসীনতাময় জীবনের দিকে পরিচালনার পরিবর্তে বরং যীশু খ্রীষ্টের সকলের-জন্য-একবারের কাজ এবং এটা যে পূর্ণ বিশ্বাসের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করে, তা বিশ্বাসীদেরকে ঈশ্বরের গৌরবের জন্য এবং আনন্দের জন্য জীবনযাপন করার জন্য সবচে’ শক্তিশালী অনুপ্রেরণা যোগায়। অধিকন্তু, বিশ্বাসের এই পূর্ণ নিশ্চয়তা এই সত্যে নিহিত যে, ঈশ্বর নিজেই আমাদের জন্য এই সমস্ত কিছু করেছেন। তিনি খ্রীষ্টেতে আমাদের জন্য তাঁর অন্তর খুলে দিয়েছেন। খ্রীষ্টকে আমাদের প্রেম করতে প্ররোচিত করানোর জন্য পিতার জন্য খ্রীষ্টের মৃত্যুকে আবশ্যক করেন নি। খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেছেন কারণ পিতা আমাদেরকে প্রেম করেন (যোহন ৩:১৬)। তিনি তাঁর পুত্রের পিছনে অশুভ অভিপ্রায় নিয়ে লুকিয়ে থাকেন না যে তিনি আমাদের মন্দ করতে পারেন – এর জন্য তাঁর পুত্রের বলিদানও করা হয় নি! না! এক হাজার বার না! – পিতা নিজেই আমাদেরকে পুত্রের প্রেমে, এবং পবিত্র আত্নার প্রেমে প্রেম করেন ।
যারা এমন নিশ্চিয়তা উপভোগ করেন তারা সাধুদের কাছে এবং মেরির কাছে যায় না। যারা শুধুমাত্র যীশুর দিকে তাকায় তাদের আর অন্য কোথাও তাকানোর প্রয়োজন নেই। তাঁর মধ্যেই আমরা পরিত্রাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা উপভোগ করি। যদি এটাই সকল “ধর্মবিরুদ্ধমতের সবচে’ বড় হয়ে থাকে? যদি ধর্মবিরুদ্ধমত হয়, তবে আমাকে সবচে’ আশীর্বাদ-প্রাপ্ত এ ধর্মবিরুদ্ধমত”কে উপভোগ করতে দিন। কেননা ঈশ্বর নিজেই সত্য ও অনুগ্রহ!
এই পোষ্টটি মূলত ট্যাবলটক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েঠিল।