মণ্ডলী সংস্কারের আবশ্যকীয়তা বিষয়ে জন ক্যালভিন

সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহসিকতা
15-08-2024
সুসমাচার মানে কি?
22-08-2024
সংস্কার-পন্থি হওয়ার সাহসিকতা
15-08-2024
সুসমাচার মানে কি?
22-08-2024

মণ্ডলী সংস্কারের আবশ্যকীয়তা বিষয়ে জন ক্যালভিন

Reforming the Church

৪৫০ বছরেরও বেশী পূর্বে, জন ক্যালভিনের কাছে মণ্ডলীতে সংস্কারের প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তার উপর লেখার জন্য অনুরোধ এসেছিল। ক্যালভিনের অন্যান্য লেখার অনুপ্রেরণার পরিস্থিতি থেকে তখনকার পরিস্থিতিগুলো একেবারে বেশ ভিন্ন ছিল, এবং এগুলো সংস্কারের পক্ষ-সমর্থনে তার অন্যান্য দিক দেখতে আমাদের সাহায্য করে। সম্রাট পঞ্চম চার্লস, ১৫৪৪ খ্রীষ্টাব্দে, স্পেয়ের শহরে মিলিত হওয়ার জন্য ‘ডায়েট অব দ্যা হলি রোমান এম্পায়ার’ আহবান করেন। স্ট্র্যাসবুর্গের মহান সংস্কারক মার্টিন বুচার, ক্যালভিনকে সংস্কারের পক্ষে মতবাদ এবং এর আবশ্যকীয়তার উপর একটি বিবৃতি প্রস্তুতের অনুরোধ করেছিলেন। এর ফলাফল ছিল উল্লেখযোগ্য। জেনেভাতে ক্যালভিনের বন্ধু এবং উত্তরসূরী থিয়োডর বেযা, “মণ্ডলীর সংস্কারের আবশ্যকীয়তা” বিষয়ক লেখাটিকে তার সময়কার সবচে’ শক্তিশালী লেখা হিসেবে অভিহিত করেন।

ক্যালভিন তিনটি বড় বড় সেকশনে তার লেখাকে ভাগ করেন। প্রথম সেকশন মণ্ডলীতে মন্দ-কাজের উপরে নিয়োজিত ছিল যা সংস্কার দাবী রাখে। দ্বিতীয় সেকশনটি সংস্কারকগণ কর্তৃক প্রণীত সেসব মন্দতার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের বিশদতা তুলে ধরে। তৃতীয়টি সংস্কারকে বিলম্বিত না করার কারণ দেখায়, বরং পরিস্থিতি “তাৎক্ষণিক সংশোধন” কতটুকু দাবী রাখে, তা প্রকাশ করে। 

এই তিনটি সেকশনের প্রত্যেকটিতে ক্যালভিন চারটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন, যেগুলোকে তিনি মণ্ডলীর প্রাণ ও দেহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মণ্ডলীর প্রাণ হলো উপাসনা ও পরিত্রাণ। দেহ হলো আচারানুষ্ঠানসমুহ এবং মণ্ডলীর শাসনতন্ত্র। ক্যালভিনের বেলায় সংস্কারের মহান কারণ এই বিষয়গুলোতে কেন্দ্রীভূত। মন্দতা, এর প্রতিকার এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আবশ্যকীয়তা এই সমস্ত কিছুই উপাসনা, পরিত্রাণ, আচারানুষ্ঠান এবং মণ্ডলীর শাসনতন্ত্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত। 

ক্যালভিনের বেলায় সংস্কারের মহান কারণ এই বিষয়গুলোতে কেন্দ্রীভূত। ক্যালভিনের জন্য এই চারটি বিষয়ের গুরুত্ব দৃষ্টিগোচর হয় যখন এই চার ক্ষেত্রে আসা আক্রমণের প্রতি তার কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করাকে আমরা স্মরণ করি, কিন্তু সেগুলোকে তিনি নিজেই সংস্কারের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে নেন। ক্যালভিনের প্রথম উদ্বিগ্নতার বিষয় ছিল যথার্থ উপাসনা। 

উপাসনা

উপাসনার গুরুত্বের উপর ক্যালভিন জোর দিয়েছেন, কারণ মানুষ খুব সহজেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞায় উপাসনা করার চেয়ে নিজেদের জ্ঞান অনুসারে উপাসনা করে। তিনি জোর দিয়েছেন যে, উপাসনা অবশ্যই কেবল ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে:

“আমি জানি এই জগতকে বিশ্বাস করানোটা কতটা কঠিন যে, ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা স্পষ্টভাবে অনুমোদিত নয় উপাসনার এমন সকল ধরণকে তিনি অননুমোদন করেন। বিপরীত এক প্ররোচনা তাদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে এঁটে থাকে, যেমন আসনে অনড় থাকা, যেমনটি চলে আসছে, আবার তা তাদের একান্ত অস্থি-মজ্জাগত, তা হচ্ছে, তারা যা কিছুই করুক না কেন তার পক্ষে তাদের নিজেদেরই পর্যাপ্ত অনুমোদন রয়েছে, ধরেই নেয়া হয় যে এতে ঈশ্বরের সম্মানের জন্য তাদের উদ্যোগ প্রদর্শন করে। কিন্তু যেহেতু ঈশ্বর একে শুধু নিষ্ফলই মনে করেন না, কিন্তু সোজা-সাপটাভাবে ঘৃণা করেন, তাঁর উপাসনার উদ্দেশ্যে আমরা যে কোন উদ্যোগই নিই না কেন, যদি তা তাঁর আদেশের সাথে ভিন্ন হয়, তবে বিপরীত পথে হেঁটে আমাদের কি লাভ? ঈশ্বরের বাক্যসমুহ খুবই পরিষ্কার এবং ভিন্ন, “বাধ্যতা, বলি উৎসর্গের চেয়ে উত্তম।”

এই প্রত্যয়ই সংস্কারের আবশ্যকীয়তার কারণগুলোর একটি:

যেহেতু ঈশ্বর, শাস্ত্রের অনেক অংশে তাঁর বাক্য দ্বারা অননুমোদিত নতুন যে কোন উপাসনাকে নিষেধ করেন; যেহেতু তিনি ঘোষনা করেন যে তিনি এমন অনুমান-নির্ভর উপাসনা প্রবর্তণের দ্বারা গুরুতরভাবে ক্রুদ্ধ হন, এবং এতে কঠোর শাস্তির ভয় দেখান, এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে আমাদের উপস্থাপিত সংস্কার প্রবল আবশ্যকীয়তার দাবী রাখে।

ঈশ্বরের বাক্যের মানদণ্ডের ভিত্তিতে ক্যালভিন রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর বিষয়ে এই উপসংহার টানেন যে, “বর্তমান কালে সাধারণ অর্থে ব্যবহার্য স্বর্গীয় উপাসনার সমস্ত রূপ নিছক দুর্নীতি ছাড়া আর বেশী কিছু নয়।”

ক্যালভিনের কাছে মধ্য-যুগীয় মণ্ডলীর উপাসনা “মোটাদাগে মূর্তিপূজায়” পরিণত হয়েছে। তার কাছে মূর্তিপূজার বিষয়টি নির্দোষিতার জন্য কর্ম-ধার্মিকতার বিষয়ের মত মারাত্মক। উভয় ক্ষেত্রেই ঈশ্বরের প্রত্যাদেশের স্থলে মানবীয় প্রজ্ঞাকে তুলে ধরা হয়েছে। উভয়ই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা এবং তাঁর প্রতি বাধ্য থাকার আকাঙ্খার বদলে বরং মানবীয় প্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ক্যালভিন দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে প্রতিমাপূজকদের সাথে উপাসনার কোন ঐক্য থাকতে পারে না:

কিন্তু এমন কথা বলা হতে পারে যে, যদিও ভাববাদীগণ এবং প্রেরিতগণ মতবাদের ক্ষেত্রে দুষ্ট যাজকদের থেকে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন, তথাপিও, তারা তাদের সাথে বলি উৎসর্গ এবং প্রার্থনায় সহভাগীতা রক্ষা করেছেন। আমি স্বীকার করি তারা করেছেন, তবে তাদেরকে প্রতিমাপূজা করতে দেয়া হয় নি। কিন্তু বৈথেলে বলি উৎসর্গ করেছেন এমন কোন ভাববাদীর বিষয় আমরা কি কখনও পড়েছি?

পুরাতন নিয়মের ভাববাদীদের মত সংস্কারকগণকে, তাদের সময়কার প্রতিমাপূজা এবং উপাসনার “লোক-দেখানো বাহ্যিকতাকে” আঘাত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ক্যালভিনের সময়ে, মণ্ডলীতে এমন নাটুকেপনার বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হয়ে উঠেছিল উপাসনার ভক্তিপূর্ণ সরলতা – যেমনটি জেনেভার মণ্ডলীর উপাসনার ধারায় প্রতিফলিত হয়েছে। এমন সরলতা উপাসনাকারীদেরকে উপাসনায় মন ও দেহ সঁপে দিতে উৎসাহিত করেছিল:

কেননা যেখানে সত্যিকারের উপাসনাকারীদের অন্তঃকরণ ও মন সঁপে দেয়া অবশ্যই কর্তব্য, সেখানে সম্পূর্ণ এক ভিন্নতায় ঈশ্বরের সেবা করার ধরণ আবিষ্কার করতে মানুষ সবসময়ই ইচ্ছুক, তাদের উদ্দেশ্য থাকে তাঁর উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কিছু বাহ্যিক ধর্মানুষ্ঠান সম্পাদন করা, অথচ তাদের নিজেদের কাছে মনটাকে ধরে রাখা। 

নির্দোষিতা

এরপরে, ক্যালভিন নির্দোষিতার বিষয় নিয়ে বলেন। এখানে তিনি স্বীকার করেন যে, এ বিষয়ে মতানৈক্য আরও শাণিত হয়েছে:

নির্দোষিতার ক্ষেত্র ছাড়া, এটি আমরা বিশ্বাস দ্বারা নাকি কাজের দ্বারা লাভ করি, তা নিয়ে আর কোন বিষয় এত সূক্ষ্মভাবে আপত্তির মুখে পড়েনি, আর কোন বিষয়ে আমাদের প্রতিপক্ষগণ তাদের অবস্থানে এত অধিক পরিমাণে দৃঢ়তা দেখান নি।

এই মতবাদের উপর “মণ্ডলীর নিরাপত্তা” নির্ভর করে এবং এই মতবাদে ভুলের কারণেই “মণ্ডলী মৃত্যুযোগ্য ক্ষতের” মুখে পড়েছে এবং “মণ্ডলী ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নীত হয়েছে।”

ক্যালভিন জোর দিয়ে বলেছেন যে শুধুমাত্র বিশ্বাস দ্বারাই নির্দোষিতা:

আমরা এ সত্যে অটল যে, কোন ব্যক্তির কাজের বর্ণনা যাই হোক না কেন, সে ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক বলে বিবেচিত হয়, কেবল, বিনা পারিশ্রমিকে দেয় দয়ার ভিত্তিতে; কারণ ঈশ্বর, কোন প্রকার কর্ম ছাড়াই, বিনামূল্যে তাকে খ্রীষ্টেতে দত্তক নেন, খ্রীষ্টের ধার্মিকতা তাকে পরিধান করিয়ে, যেন এ ধার্মিকতা তার নিজেরই।”

খ্রীষ্টানদের জীবন এবং অভিজ্ঞতার উপরে এই মতবাদের সুগভীর প্রভাব রয়েছে:

মানুষকে তার দারিদ্র এবং শক্তিহীনতা বিষয়ে প্রত্যয়ী করানোর দ্বারা, আমরা তাকে সত্যিকারের নম্রতার উদ্দেশ্যে আরও বেশী কার্যকরভাবে তৈরী করি, তাকে আত্ম-বিশ্বাস অস্বীকার করার দিকে পরিচালিত করি, এবং তাকে সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের হাতে ছুঁড়ে দিই; এবং সেই একইভাবে, আমরা তাকে কৃত্জ্ঞ থাকা বিষয়ে আরও বেশী কার্যকরভাবে প্রশিক্ষণ দিই, তাকে এ সত্যে নিতে সাহায্য করি যে, তার মধ্যে যদি ভাল কোন কিছু থেকেও থাকে, ঈশ্বরের দয়ার কারণেই তা রয়েছে।

আচারানুষ্ঠানসমুহ

ক্যালভিনের তৃতীয় বিষয় হলো আচারানুষ্ঠান যা নিয়ে তিনি বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে “মানুষের দ্বারা প্রবর্তিত পর্বগুলো খ্রীষ্টের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিগূঢ়তত্ত্বের সাথে সম-অবস্থানে রাখা হয়েছে” এবং বিশেষভাবে প্রভুর ভোজকে “নাট্য প্রদর্শনীতে” পরিণত করা হয়েছে। ঈশ্বরের আচারানুষ্ঠানগুলোর এমন অপব্যবহার অসহ্য।

এখানে প্রথম যে বিষয় নিয়ে অভিযোগ করি, তা হলো, প্রদর্শিত পর্বগুলোর মধ্যদিয়ে লোকদের চিত্ত বিনোদন করা হচ্ছিল, কিন্তু সেগুলোর তাৎপর্য ও সত্য সম্পর্কে একটি শব্দও বলা হচ্ছে না। কেননা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে আচারানুষ্ঠানগুলোর চিহ্ন কি অর্থ বহন করে, যদি না তা ব্যাখ্যা করা হয় তবে সেগুলো ব্যবহারের কোন মানেই হয় না।” 

ক্যালভিনের দুঃখ হচ্ছে, প্রাথমিক মণ্ডলীতে থাকা আচারানুষ্ঠানগত মতবাদ ও চর্চার সরলতা হারিয়ে গিয়েছে। এটা প্রভুর ভোজের মধ্যে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। প্রসাদ বিতরণ কল্পে বলিদান, অন্তর্বস্তুর অস্তিমান, এবং পবিত্রীকৃত রুটি ও দ্রাক্ষারসের উপাসনা অবাইবেলভিত্তিক এবং আচারানুষ্ঠানের প্রকৃত অর্থকে নস্যাৎ করেছে।

যেখানে আচারানুষ্ঠান হওয়া উচিত ভক্তিপূর্ণ মনকে স্বর্গে উঠানোর উপায়, সেখানে ভোজের এই পবিত্র প্রতীকতাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করা হচ্ছে, এবং লোকেরা সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে এবং সেগুলোকে উপাসনা করে, একবারও খ্রীষ্টের বিষয়ে চিন্তা করে না।

খ্রীষ্টের কাজকে ধ্বংস করা হয়েছে, যেমন এটা প্রসাদ বিতরণমূলক বলিদানের ধারণার মধ্যে দেখা যেতে পারে, যেখানে “খ্রীষ্টকে দিনে হাজার বার বলিদান করা হচ্ছে, যেন তিনি আমাদের জন্য তাঁর একবারের মৃত্যুতে যতটুকু দরকার ততটুকু করেন নি।” 

প্রভুর ভোজের প্রকৃত অর্থকে ক্যালভিনের দ্বারা সরলভাবে সারাংশ করা হয়েছে:

আমরা সবাইকে বিশ্বাসের সাথে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষা দিই ……… আমরা …….. প্রচার করি যে ভোজে খ্রীষ্টের দেহ ও রক্ত উভয়ই আমাদের জন্য প্রভু কর্তৃক উৎসর্গ করা হয়; এবং আমাদের দ্বারা গৃহীত হয়। এরূপে সেগুলো তুলে ধরে এমন কোন অন্তর্ভূক্তিমূলক ধারণাকে তাৎক্ষণিকভাবে বাদ না দিয়ে, এমন শিক্ষা আমরা দিই না যে, রুটি ও দ্রাক্ষারস শুধুই প্রতীক।

খ্রীষ্ট সত্যিকার অর্থে নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং যারা বিশ্বাসের সাথে এই ভোজে অংশগ্রহণ করেন তাদেরকে তাঁর উদ্ধারজনক সকল সুবিধা দেন।

আচারানুষ্ঠানগেুলো বিষয়ে ক্যালভিনের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয়ে তার সমাধান বিষয়ে আমাদেরকে সামান্য ধারণা দেয় মাত্র। তিনি বাপ্তিষ্মের বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিয়েছেন এবং পাঁচটি অতিরিক্ত আচারানুষ্ঠান বিষয়ে রোমের অবস্থানকে প্রত্যাখান করেন। 

মণ্ডলীর শাসনতন্ত্র

শেষে, ক্যালভিন মণ্ডলীর শাসনতন্ত্রের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে এটি বিশাল এক বিষয় হতে পারে: “মাণ্ডলীক শাসনতন্ত্রের শুধু দোষগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে দেখা, আমার কখনই তা উচিত হত না।” তিনি পালকীয় দপ্তরের গুরুত্বের বিষয়ে আলোকপাত করেন। শিক্ষা দেয়ার সুযোগ এবং দায়িত্বই এই দপ্তরের প্রধান বিষয়: “যিনি শিক্ষা দেয়ার কাজ করেন না, তিনি মণ্ডলীর সত্যিকারের পালক নন।” সংস্কারের মহান একটি অর্জন হলো ঈশ্বরের লোকদের জীবনে শিক্ষাদানের উপযুক্ত স্থানে একে পুনঃস্থাপিত করা। “আমাদের কোন মণ্ডলীকেই বাক্যের সাধারণ প্রচার-বিহীন দেখা যায় না।” পালকীয় দপ্তর অবশ্যই শিক্ষা দেয়ার সাথে পবিত্রতাকে সংযুক্ত করবে: “যারা মণ্ডলীতে পরিচালনা দিতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই অন্যদেরকে ছাপিয়ে যেতে হবে, এবং পবিত্রতর জীবনের উদাহরণের দ্বারা আলো ছড়াতে হবে।”

ক্যালভিনের প্রথম উদ্বিগ্নতার বিষয় ছিল যথার্থ উপাসনা।

ক্যালভিন অভিযোগ করেন যে, শিক্ষাদান ও পবিত্রতার পিছু ছুটার পরিবর্তে, রোমান মণ্ডলীর নেতৃত্ব, ঈশ্বর কর্তৃক তাদেরকে দেয়া হয়নি এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দাবী করে, ঈশ্বরের লোকদের প্রাণের উপরে “এক নিষ্ঠুর শাসনের” চর্চা করছে। মণ্ডলীর হাত-পা বেঁধে ফেলার মত এমন অবাইবেল-ভিত্তিক ঐতিহ্য থেকে সংস্কার গৌরবময় এক মুক্তি এনে দিয়েছে।

যেহেতু, যে অযৌক্তিক দাসত্বে বিশ্বস্তরা বন্দী ছিল, তা থেকে তাদের বিবেককে মুক্ত করা আমাদের দায়িত্ব ছিল, তাই আমরা শিক্ষা দিয়েছি যে তারা মানবীয় আইন থেকে স্বাধীন ও অশৃঙ্খলীত, এবং এই স্বাধীনতা, যা খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা ক্রীত, তাকে লঙ্ঘণ করা যাবে না।”

রোমান মণ্ডলী, বিশেষভাবে অভিষেকের বেলায় প্রৈরিতীক উত্তরসূরিতে জোর দিয়েছে। ক্যালভিন জোরালোভাবে বলেন যে, সংস্কার-পন্থি অভিষেক খ্রীষ্ট, প্রেরিতদের, এবং প্রাচীন মণ্ডলীর বিশুদ্ধ শিক্ষা এবং চর্চাকে অনুসরণ করে। তিনি লক্ষ্য করেন, “কেউই অভিষেকের অধিকার দাবী করতে পারে না, যদি না এ বিষয়ক মতবাদের শুদ্ধতা দ্বারা, মণ্ডলীর একতা রক্ষা করেন।” 

সংস্কার

ক্যালভিন সংস্কারের গতিধারার উপর আলোকপাত করে এই গবেষণা-গ্রন্থের সমাপ্তি টানেন। তিনি লুথারকে সংস্কার শুরুর উৎস হিসেবে দেখেছেন যিনি “মৃদু হস্তে” সংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন। রোমের প্রতিক্রিয়া ছিল “সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতা দিয়ে সত্যকে চাপিয়ে রাখা।” এই যুদ্ধ ক্যালভিনকে অবাক করে নি, কেননা “সুসমাচারের সমরূপ নিয়তি, যেখান থেকে এর যাত্রা শুরু, যা এখনও চলমান, এবং সর্বদাই থাকবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত থাকবে, সে নিয়তি মহা বিবাদের মাঝেও জগতে প্রচারিত হবে।”

ক্যালভিন এই প্রসঙ্গগুলোর গুরুত্বের নিরিখে চলমান বিতর্কের কারণে মণ্ডলীর জীবনে উদ্ভুত এই সমস্যাকে ন্যায্য মনে করেন। তিনি এ সত্যতার সাথে কোন ন্যূনতম ছাড় দেয়ার অনুমতি দেন না, যে সত্যতা হচ্ছে “খ্রীষ্টান ধর্মের সামগ্রিক দিক গোল্লায় যেতে বসেছে।” যেহেতু সংস্কারকগণ বাইবেলের প্রতি বাধ্য থেকে কাজ করেছেন, তারা কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এমন যে কোন অভিযোগকে তিনি প্রত্যাখান করেছেন:

সর্বপ্রথমে যে যে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে, তা হচ্ছে, মণ্ডলীকে এর মস্তক খ্রীষ্ট থেকে পৃথক করে ফেলার বিষয়ে সতর্ক হওয়া। আমি যখন বলছি খ্রীষ্ট, আমি তাঁর সুসমাচারের মতবাদকে অর্ন্তভূক্ত করি, যা তিনি তাঁর রক্তে মুদ্রাংকিত করেছেন ……… তাই এটা এক অটল দিক হোক যে, পবিত্র এক একতা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান আছে, যখন, বিশুদ্ধ মতবাদে সম্মতি জ্ঞাপন করে, আমরা কেবলমাত্র খ্রীষ্টেতে একতাবদ্ধ হই।

মণ্ডলীর নাম একতা প্রদান করে না, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যে থাকা এমন সত্যিকারের মণ্ডলীর বাস্তবতা একতা প্রদান করে।

ক্যালভিন, তারপরে মণ্ডলীতে সংস্কারের কাজটির কে যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারে এই বাস্তব প্রশ্নের দিকে আসেন। পোপ মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দিতে পারেন অথবা সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষায় সংস্কার করার ধারণাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন:

বিশপকে প্রৈরিতীক ধারায় হতে হবে এমন ধারণাকে আমি অস্বীকার করি, যেখানে শুধু সর্বনাশ আর হতবাক করার মত ধর্মভ্রষ্টতা – আমি তাকে খ্রীষ্টের প্রতিনিধি হিসাবে অস্বীকার করি, যে হিংস্রভাবে সুসমাচারকে অত্যাচার করছে, তার আচরণ দ্বারাই সে প্রমাণ করেছে যে সে খ্রীষ্টারি – আমি তাকে পিতরের উত্তরসূরী হিসেবে অস্বীকার করি, যে পিতরের তৈরীকৃত সমস্ত মজবুত মতবাদকে ধ্বংস করছে এবং আমি তাকে মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে অস্বীকার করি, যে তার স্বৈরতন্ত্র দিয়ে মণ্ডলীকে ছিন্নভিন্ন করছে এবং বিভাজিত করছে, মণ্ডলীর সত্যিকার ও একমাত্র মস্তক, খ্রীষ্ট থেকে, একে বিচ্ছিন্ন করছে।

তিনি জানেন যে মণ্ডলীর সমস্যাগুলোকে সমাধান করার জন্য অনেকেই বিশ্বজনীন কাউন্সিলের আহবান করেন, কিন্তু ভয় হয় যে এমন কাউন্সিল কখনই মিলিত হতে পারবে না, এবং যদি হয়ও, এটা পোপের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। তিনি পরামর্শ দেন যে মণ্ডলীর উচিত প্রাচীন মণ্ডলীর চর্চাগুলো অনুসরণ করা এবং এই বিষয়গুলোকে স্থানীয় এবং প্রাদেশিক বিভিন্ন কাউন্সিলে সমাধান করা উচিত। যে কোন ক্ষেত্রে, সমস্যাটিকে অবশ্যই শেষমেষ ঈশ্বরের কাছে ছেড়ে দিতে হবে, যিনি সমস্ত সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য উপযুক্ত আশীর্বাদ মঞ্জুর করবেন: “আমরা আসলেই আকাঙ্খী, যেমনটা আমাদের উচিত যে, আমাদের পরিচর্যা-কাজ জগতের কাছে সম্মানীত প্রমাণিত হোক; কিন্তু এটাতে ফলাফল দেয়ার কাজ ঈশ্বরের কাছে, আমাদের না।” 

সম্পাদকীয় নোট: এই নিবন্ধটি মূলতঃ ডঃ ডব্লিউ. রবার্ট গডফ্রে কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে here.

ডঃ ডব্লিউ. রবার্ট
ডঃ ডব্লিউ. রবার্ট
গডফ্রে লিগনিয়্যার বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আজীবন সভাপতি এবং ক্যালিফোর্নিয়াস্থ ওয়েষ্টমিনস্টার সেমিনারিতে মণ্ডলীর ইতিহাস বিষয়ে আজীবনের জন্য প্রভাষক। তিনি কয়েকটি বইয়ের লেখক, এর মধ্যে রয়েছে সেইভিং দ্যা রিফর্মেশন এবং লার্নিং টু লাভ দ্যা সালমস বইগুলোও রয়েছে।