
দায়ুদসমন্ধে৫টিবিষয়আপনারজানাউচিত
07-10-2025
ন্যায্যতা সমন্ধে ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত
04-11-2025মার্টিন লুথার সমন্ধে ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত
স্টিফেন নিকোলস
১. মার্টিন লুথার তার পরিণত বয়সে আনুমানিক প্রতি তিন সপ্তাহে একবার গীতসংহিতা পুস্তক পড়তেন।
শুধুমাত্র শাস্ত্র (সোলা স্ক্রিপচুরা)। এই ল্যাটিন শব্দের অর্থ হলো “শুধুমাত্র শাস্ত্র।” এর অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র শাস্ত্রই আমাদের মতবাদ, মণ্ডলীর চর্চা, এবং খ্রীষ্টিয় জীবনের জন্য চুড়ান্ত কর্তৃত্ব। সংস্কার-যুগের প্রাথমিক বছরগুলোতে, লুথার এই বিষয় নিয়ে লড়াই করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী সৎকর্ম এবং গুণ বিষয়ক ভ্রান্ত সুসমাচার প্রচার করছিল। এর পরিবর্তে, তিনি শুধুমাত্র বিশ্বাস (সোলা ফিদে) অর্থাৎ বিশ্বাস হেতুই ন্যায্যতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। রোমান ক্যাথলিক কর্মকর্তাদের সাথে বিতর্কের প্রথম দিকে, যেমন ১৫১৯ খ্রীষ্টাব্দে লিপযিগে অথবা ১৫২১ খ্রীষ্টাব্দে ওয়ার্মসের মত বিতর্কের প্রথম দিকে, এ্যাকের সাথে, লুথারকে তার অবস্থানের পক্ষে উৎসগুলো বিষয়ে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। যদি তিনি মণ্ডলীর বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তাহলে তিনি কিসের উপর ভিত্তি করে দাঁড়াচ্ছেন? “তিনি বজ্র কন্ঠে বলেছেন, “শাস্ত্র।” লুথার শাস্ত্রের ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েছেন।
লুথার তার জীবন ব্যয় করেছেন, বাইবেলের পক্ষ-সমর্থন করে, পাঠ করে, অধ্যয়ন করে, জীবন-যাপন করে এবং ভালবেসে। তিনি প্রতি বছরে দুই বা তিনবার পুরো বাইবেল পাঠ শেষ করতেন, আবার তিনি কোন কোন বিশেষ শাস্ত্রাংশ বা পুস্তক আরও গভীরভাবে অধ্যয়ন করতেন। তিনি বিশেষভাবে গীতসংহিতা পুস্তক ভালবাসতেন। তিনি বাইবেল পাঠের প্রাত্যহিক সময়-সূচি অনুসরণ করতেন যাতে তিন সপ্তাহে সম্পূর্ণ গীতসংহিতা পাঠ শেষ হতো। লুথার “শুধুমাত্র শাস্ত্র” বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এবং সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করতেন।
২. চার্চের দরজায় তার নাইনটি-ফাইভ থিসিস টাঙ্গিয়ে দেওয়ার পর, হিডেলবার্গ বিতর্কের জন্য লুথার টুয়েন্টি-এইট থিসিস নামক একটি সিরিজও লিখেছিলেন।
১৫১৭ খ্রীষ্টাব্দের অক্টোবরের ৩১ তারিখে টাঙ্গানো লুথারের নাইনটি-ফাইভ থিসিস, প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারকে প্রজ্জ্বলিত করেছিল। যে সময়ে তিনি আগস্টিন-সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসী ছিলেন এবং সে অঞ্চলে তার সন্ন্যাস-সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন, তখন যোহানেস স্টৌপিটয, লুথারের সমালোচনার প্রতি সহানুভুতিশীল ছিলেন। স্টৌপিটয, হিডেলবার্গে ১৫১৮ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত আগস্টিনীয় সম্প্রদায়ের সভায় এর যুক্তি তুলে ধরার জন্য, লুথারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
হিডেলবার্গে, তিনি ১৬ নম্বর থিসিস নিয়ে তার যুক্তি তুলে ধরেন, “যে ব্যক্তি তার মধ্যে যা আছে তা দিয়ে কাজ করে অনুগ্রহ লাভ করতে পারে বলে বিশ্বাস করে, সে পাপের সাথে পাপ যোগ করে, তাই সে দ্বিগুণ দোষী হয়ে পড়ে।” তিনি ১৭ নম্বর থিসিস নিয়ে বলতে থাকেন, “এই ভঙ্গিতে কথা বলা হতাশার উদ্রেক করার কথা না, কিন্তু নিজেকে নম্র করতে আকাঙ্খা জাগ্রত করা এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ অন্বেষণ করা দরকার।” যদিও আমরা আমাদের নিজেদের অক্ষমতায় হতাশ হই, তথাপিও আশা রয়েছে। এটা আমাদের মধ্যে পাওয়া যায় না, কিন্তু খ্রীষ্টেতে এবং সুসমাচারে পাওয়া যায়।
হিডেলবার্গ থিসিসের ২৮ নম্বর থিসিসের লাইনটি লুথারের লেখনিগুলোর মধ্যে হয়তো সবচে’ সুন্দর: “ঈশ্বরের প্রেম অন্বেষণ করে না, কিন্তু সৃষ্টি করে, যা এমনিতেই সন্তুষ্টিকর।” ঈশ্বর আমাদের প্রেম করেছেন এবং খ্রীষ্টকে আমাদের জন্য প্রেরণ করেছেন এমনকি যখন আমরা তাঁর শত্রু ছিলাম। এটাই হলো অনুগ্রহ।
৩. লুথার, প্রাক্তন এক সন্যাসী, প্রাক্তন আরেক সন্ন্যাসিনীকে বিয়ে করেন।
নিম্বসেন কনভেন্ট থেকে একদল সন্ন্যাসিনী পালিয়ে গিয়ে উইটেনবার্গের দিকে চলে যান। কেউ কেউ তাদের পরিবারে ফিরে যান। কেউ কেউ উইটেনবার্গে শিক্ষার্থীদের অথবা পালকদের বিয়ে করেন। তাদের মধ্যে, ক্যাটরিনা ভন বরা নামে একজন, ১৫২৫ খ্রীষ্টাব্দে মার্টিন লুথারকে বিয়ে করেন। লুথার তাকে “ক্যাটি, আমার পাঁজর” বলে ডাকতেন। তারা দুর্দান্ত দম্পত্তি ছিলেন। লুথার একদিকে ক্লান্তিহীনভাবে সংস্কারকে এগিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন তিনি এক ব্যস্ত পরিবার, বড় বাগান, মাছের ঘের, এবং ছোট এক মদের কারখানা সামাল দিতেন। তাদের নিজেদেরই ছয় ছেলেমেয়ে ছিল, এবং সাথে তারা আত্মীয়-পরিজন হারা এতিমদের দত্তকও নিয়েছিলেন। তারা তাদের এক শিশু পুত্রকে হারিয়েছিলেন এবং তেরো বছর বয়সী কন্যা, ম্যাগড্যালিনার মৃত্যুর শোক বহন করেন।
মার্টিন লুথার মৃত্যুবরণ করার পরে, ক্যাটি কঠিন সময়ে পড়ে যান। বন্ধু-বান্ধব এবং সাহায্যকারীরা তাকে সহায়তা করতে জড়ো হন। এমন কঠিন সময়ে তিনি স্বীকার করেন, “আমি নিজেকে পোশাকের সাথে এঁটে থাকার মত খ্রীষ্টের সাথে আটকা থাকতে দেখি।”
৪. ধর্মতত্ত্ববিদের মত মার্টিন লুথার উত্তম এক সুরকারও ছিলেন।
লুথার সংগীত ভালবাসতেন। তিনি তারের বাজনা লুট বাজাতেন। তিনি ১৫২৪ খ্রীষ্টাব্দে তার প্রথম স্তবগান লিখেন – যা মুলত স্তবগানের চেয়েও অধিকতর লোকগাথার মত ছিল – যার শিরোনাম ছিল “এ্যা নিউ সং শ্যাল হিয়ার বি বিগান।” এটিতে দীর্ঘ বারোটি স্তবক ছিল এবং যেটি নেদারল্যান্ডে দুই আগস্টিনীয় ভিক্ষুর সাক্ষ্যমরতার মৃত্যুর স্মরণে লেখা হয়। তারা লুথারকে অনুসরণ করতেন এবং বিশ্বাসান্তরীত হয়েছিলেন এবং সংস্কার মতবাদের প্রচারকে পরিণত হয়েছিলেন, তারা তাদের জন্ম ভূমিতে সুসমাচার নেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তারা বন্দী হন এবং সাক্ষমর হন। এই সংবাদ যখন লুথারের কাছে পৌঁছে, তিনি সংগীত নিয়েই ডুবে থাকেন। পাঁচ বছর পর তিনি তার সবচে’ বিখ্যাত স্তবগান এবং যুক্তির খাতিরে বলতে হয় তিনি খুব সম্ভবতঃ মণ্ডলীর ইতিহাসের সবচে’-বেশী প্রিয় স্তবগানটি লেখেন, যেটি হচ্ছে, “এ্যা মাইটি ফট্রেস ইজ আওয়ার গড।” তিনি ১৫২৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম প্রোটেস্ট্যান্ট স্তব-গ্রন্থের প্রকাশনা করেন। তিনি লুথার্যান মণ্ডলীতে এবং ধ্রুপদি সংগীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরকারদেরকে অনুপ্রাণিত করেন। কিছু সময়ের জন্য, লুথার এইসেনেখে পড়াশুনা করেন, যে শহরটি যোহান সেবাসটিয়্যান ব্যাচের মত, সর্বোচ্চ পর্যায়ের লুথার্যান ধারার সংগীতজ্ঞের শহর ছিল।
এক পর্যায়ে লুথার বলেছেন, “ধর্মতত্ত্বের পরে, আমি সংগীতকে সবচে’ উচ্চস্থানে রাখি এবং সবচে’ বেশী সম্মান দিই।”
৫. মার্টিন লুথার তার নিজ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
মার্টিন লুথার ১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দের, নভেম্বরের ১০ তারিখ ইসলেবেনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫১১ খ্রীষ্টাব্দে উইটেনবার্গে পড়াশুনা এবং শিক্ষকতা করতে গিয়েছিলেন। উইটেনবার্গ শহর তার সাথে সবচে’ কাছের সহযোগী হয়ে উঠেছিল। সেখানে তিনি সন্ন্যাসী হিসেবে ছিলেন। তিনি সেখানে তার নাইনটি-ফাইভ থিসিস টাঙ্গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে বিয়ে করেন এবং তার পরিবার গড়ে তোলেন। তিনি প্রায় প্রতিদিনই উইটেনবার্গের সেন্ট মেরিস চার্চে প্রচার করতেন, এবং তিনি উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করেন। ১৫৪৬ খ্রীষ্টাব্দের জানুয়ারিতে, ইসবেনে এক বিতর্কের বিস্ফোরণ হয় যা মণ্ডলী এবং শহরটিকে ধ্বংসের হুমকিতে ফেলে দিয়েছিল। লুথার, প্রবীণ লোক হিসাবে, তার বয়সের কথা চিন্তা না করে, তার নিজের শহরের দিকে যাত্রা করেন।
এক কঠিন যাত্রা পাড়ি দিয়ে, লুথার তার নিজের শহরে আসলে বীরোচিত অভ্যর্থনা লাভ করেন, বিপক্ষ দলগুলোর মধ্যে শান্তির মধ্যস্থতা করেন, কয়েক বার মাত্র প্রচার করেন এবং পরে, অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার বিছানা তার মৃত্যুর বিছানায় পরিণত হয়। তিনি এক টুকরো কাগজে তার সবশেষ কথাগুলো আঁকেন: “আমরা ভিক্ষুক। এটা সত্য।” লুথার ১৫৪৬ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন। ক্যাটির মতো, তিনিও শেষ পর্যন্ত খ্রীষ্টের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।
এই প্রবন্ধটি ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত-এর অংশবিশেষ থেকে সংগৃহীত।
এই প্রবন্ধটি মূলতঃ লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজ ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।


