


এশিয়াতে পৌলের ক্লেশভোগ
24-04-2025


করিন্থীয়দের প্রতি সমাপনী সম্ভাষন
01-05-2025সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর



২ করিন্থীয় ১:৩-৭
“ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনিই করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন, যেন আমরা নিজে ঈশ্বরদত্ত যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনা প্রাপ্ত হই, সেই সান্ত্বনা দ্বারা সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি” (৩-৪ পদ)।
পৌল একজন যিহুদী হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন (ফিলিপীয় ৩:৪-৫), এবং আজকের শাস্ত্রাং‡k তার যিহুদীপনা বেরিয়ে এসেছে। ২ করিন্থীয় ১:৩-৭ পদে প্রেরিতের প্রারম্ভিক আশির্বাদ দেওয়ার ধরণ প্রথম শতাব্দিতে সমাজ গৃহে যিহুদীরা যেভাবে আশির্বাদ দিতেন তার মতোই। এই আশির্বাদজ্ঞাপনসমুহ, পৌল যে আশির্বাদবানী উচ্চারণ করেছেন তার একের মতোই, ঈশ্বরের মহান অনুগ্রহের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। সেটা আশ্চর্যের বিষয় না, কারণ পুরাতন নিয়ম প্রায়ই ঈশ্বরের অনুগ্রহশীল চরিত্রের উপর গুরুত্বারোপ করে (যেমন., যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬)। যাই হউক না কেন, পৌল শুধুমাত্র এমনি এমনি যিহুদীদের এই আশির্বাদজ্ঞপনকে পুনরাবৃর্ত্তি করতেন না, বরং, তিনি এই আশির্বাদজ্ঞাপনকে ঈশ্বরের প্রতি “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা” হিসাবে উল্লেখ করে স্বাতন্ত্রভাবে খ্রীষ্টিয় করেন (২ করিন্থীয় ১:৩)।
২ করিন্থীয় ১:৩-৭ পদের আশির্বাদজ্ঞাপনে, পৌল প্রভু সম্পর্কে আরও বলেছেন যে তিনি “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” (৩ পদ)। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর হইতে সান্ত্বনার এই ধারণা এই প্রারম্ভিক পদগুলোতে এবং এই পত্রের বাকী অংশগুলোতে নিয়মিতভাবে দেখা যায়। প্রেরিত পৌল তিনি উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে এটা করেছেন। যিশাইয় ৪-৬৬ অধ্যায় মশীহের যুগের সূচনায় প্রভু যে সান্ত্বনা দিবেন তার উপর গুরুত্ব প্রদান করে, তাই ঈশ্বরিক সান্ত্বনার উপর পৌলের দৃষ্টি আকর্ষন হলো একটি সুক্ষ মনে করিয়ে দেওয়া যে বিশ্বাসীরা এই মশীহের যুগে বসবাস করছে। যদিও এই যুগের পুর্ণতা খ্রীষ্টের ফিরে এসে নূতন স্বর্গ এবং আকাশ নিয়ে আসার অপেক্ষা করে (প্রকাশিতবাক্য ২১:১-২২:৫ দেখুন), আমরা তাঁর পরিত্রাণের যুগে আছি, এমনকি এখনই আছি এবং ঈশ্বরের হস্ত হতে আমাদের মহান সান্ত্বনা প্রত্যাশা করা উচিত।
২ করিন্থীয় ১:৪ পদে পৌল বলেন যে, ঈশ্বরের সান্ত্বনা “আমাদের সমস্ত ক্লেশভোগে” আমাদের কাছে আসে। এখানে, “ক্লেশ” বলতে অভ্যন্তরীন দুঃখ এবং অস্থিরতাকে বোঝানো হয়েছে যা আমরা বাহ্যিক অসুবিধাসমুহের জন্য অনুভব করে থাকি, বিশেষভাবে, সেই অসুবিধাসমুহ যা আমরা জগত থেকে মোকাবেলা করে থাকি যেগুলো খ্রীষ্টের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ। আমরা যেমন দেখতে পাব, ভ্রান্ত প্রেরিতগন যারা করিন্থীয় মণ্ডলীতে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল তারা পৌলের প্রেরিতত্ব নিয়েও প্রশ্ন তলে ছিল কারণ তার দুঃখ ভোগ ছিল খ্রীষ্টের জন্য (১১:১–১২:১০)। পরবর্তীতে পৌল এই ধারণাকে বিস্তৃত করে বলেছেন যে, দুঃখভোগ প্রকৃতপক্ষে পৈরিতিক আহবানের প্রমানকে প্রদর্শন করে, কিন্তু এখানে, প্রভু যে বিশ্বাসীদের দুঃখ কষ্টে তাদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ সুসুমাচারের জন্য দুঃখভোগ সত্যিকারের শিষ্যত্বের একটি অংশ। অধিকন্তু, উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যে সান্ত্বনা প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে তা হলো আমরা যখন দুঃখভোগ করি তখন আমরা অন্তরে যে অস্থিরতা অনুভব করি তার জন্য। ঈশ্বর আমাদেরকে দুঃখভোগ থেকে সম্পুর্ণভাবে মুক্ত করবেন এমন প্রতিজ্ঞা তিনি কখনই করেন নি। পক্ষান্তরে, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে আমাদের দুঃখভোগের সময় আমাদেরকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং সহ্য করার জন্য তিনি অনুগ্রহ দিবেন (দ্বিতীয়বিবরণ ৩১:৮; ২ করিন্থীয়১২:৮-৯)।
দুঃখভোগ ঈশ্বরের একটি উপহার। এটা নিজ থেকে কোন ব্যাথা নয়, এটা উত্তম বিষয়; এবং দুঃখভোগে আমরা খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হই- যেহেতু আমরা তাঁর নামের জন্য ক্লেশভোগ করি, আমাদের জন্য নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে ঈশ্বরের সান্ত্বনা আমাদের জন্য রয়েছে। এর জন্যই আমরাও অন্যদেরকে সান্ত্বনা দিতে পারি (২ করিন্থীয় ১:৫-৭)।
ঈশ্বরের মুখ
আজকের শাস্ত্রাং‡k জন কেলভিন মন্তব্য করেছেন যে, “আত্নার প্রাচুর্যগুলো…. আমাদের নিজেদের মধ্যে রেখে দেওয়ার মতো কিছু নয়, কিন্তু সে যা গ্রহণ করেছে তার প্রত্যেকেটিই অবশ্যই অন্যকে দেওয়া উচিত।” ঈশ্বর আমাদের জীবনে খ্রীষ্টের জন্য ক্লেশভোগ ঘটতে দেন যেন আমরা অন্যদেরকে যারা খ্রীষ্টের জন্য দুঃখভোগ করছে তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে পারি। এর অর্থ হলো আমাদের ক্লেশভোগ যেন সত্যিকারে অন্যদের উপকারের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
এই প্রবন্ধটি মূলতঃ লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজ ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।