পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন এর অর্থ কি?
13-04-2024
অনুতাপ কেমন হতে পারে?
12-08-2024
পাপ-মোচন ও সন্তুষ্টি-সাধন এর অর্থ কি?
13-04-2024
অনুতাপ কেমন হতে পারে?
12-08-2024

যিশু খ্রিষ্ট: ঈশ্বরের মেষশাবক

xr:d:DAFXk0WDSFg:25,j:45162075609,t:23011320

ঈশ্বরের মেষশাবক সম্পর্কিত ধারণাটি যেন এক কেশগুচ্ছ যা মুক্তির ইতিহাস জুড়ে চলে আসছে। আদিপুস্তক ২২ অধ্যায়ের সেই ঘটনা পর্যন্ত এর রেশ টানা যেতে পারে, যখন ঈশ্বর অব্রাহামকে মোরিয়া পর্বতে যাওয়ার জন্য এবং তার পুত্র ইসহাককে বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্য আহবান করেছিলেন। অব্রাহাম, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতায়, তা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে, বেদীতে ইসহাককে বেঁধে ফেলার পরে এবং যখন তার বুকে অব্রাহাম ছুরি প্রায়ই চালিয়ে দিচ্ছিলেন, ঈশ্বর তাকে থামালেন, বললেন, “যুবকের প্রতি তোমার হস্ত বিস্তার করবে না, ওর প্রতি কিছুই করবে না, কেননা এখন আমি বুঝলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও” (১২ পদ)। সেখানে অব্রাহামের পেছনে একটা ঝোপ ছিল, এবং তিনি পেছনে ফিরে একটি মেষ দেখতে পান যেটির শৃঙ্গ ঝোপে বদ্ধ ছিল। ঈশ্বর অব্রাহামের পুত্রের স্থলে বিকল্প বলি হিসেবে একটি মেষ যুগিয়ে দিলেন। অবশ্য, অব্রাহাম যে মেষ ধরেছিলেন এবং ইসহাকের স্থলে বলি দিয়েছিলেন, তা যে পাপ-মোচনার্থক উৎসর্গ ছিল, এমনটি আদিপুস্তক ২২ অধ্যায়ে কখনই বলা হয়নি। তথাপি, এটি বিকল্প বলিদান ছিল, এই ধারণাটাতেই খ্রিষ্টের প্রায়শ্চিত্ত্বের মূল ধারণা রয়েছে। যিশু আমাদের বিকল্প হিসেবে কাজ করেন, এবং ঈশ্বর আমাদের পাপের শাস্তি হিসেবে তাঁর ক্রোধ আমাদের পরিবর্তে তাঁর উপরে ঢেলে দেন। তৎপরে, ঈশ্বর তাঁর একান্ত নিজের মেষশাবক যোগান এবং সেই বিকল্পের জীবন গ্রহণ করেন।

ঈশ্বর আমাদের পাপের শাস্তি হিসেবে তাঁর ক্রোধ আমাদের পরিবর্তে যিশুর উপরে ঢেলে দেন।

একইভাবে, ঈশ্বরের মেষশাবক নিশ্চিতই নিস্তারপর্বে প্রতিরূপকৃত হয়েছেন। যখন ঈশ্বর মিশরীয়দের ‍উপর তাঁর চুড়ান্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, যে আঘাতের মধ্য দিয়ে ফরৌণের রাজপুত্র সমেত, মিশরীয়দের প্রত্যেক প্রথমজাত পুরুষ সন্তান মারা যাবে। আর তিনি তাঁর প্রজা ইস্রায়েলের লোকদেরকে নিঁখুত মেষশাবক জবাই করতে বলেছিলেন, আর রক্ত দরজার কবাটে লাগানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি যে সমস্ত দরজার কবাটে মেষশাবকের রক্ত লেপন করা দেখবেন, তিনি সেই সমস্ত ঘর পাশ কাটিয়ে যাবেন (যাত্রাপুস্তক ১২:৩-১৩)। সেই সমস্ত মেষশাবকের রক্ত ঠিক যেভাবে ইস্রায়েল জাতির লোকদেরকে ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছিল, ঈশ্বরের মেষশাবক তাঁর লোকদের পাপের কারণে তাদেরই প্রাপ্য শাস্তি থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

আদিপুস্তক ২২, যাত্রাপুস্তক ১২ অধ্যায়ে এবং পুরাতন নিয়ম জুড়ে অন্যান্য শাস্ত্রাংশে এ প্রতিরূপ দেয়ার পরেও, “ঈশ্বরের মেষশাবক” উপাধিটি প্রেরিত যোহনের আবিষ্কার বলা মূর্খতার শামিল। যোহন বাপ্তাইজকের কথাগুলো, যিশুর সময়কার ইহুদিদের পবিত্র শাস্ত্র, পুরাতন নিয়মের উপরে, তার জ্ঞান দ্বারা যোহন অবহিত হয়েছিলেন।

যোহন লিখিত সুসমাচারের প্রথম অধ্যায়ে যীশুর জন্য “ঈশ্বরের মেষশাবক,” “ঈশ্বরের পুত্র,” “মশীহ,” “মনুষ্য পুত্র,” এবং এরূপ তাৎপর্যপূর্ণ উপাধীগুলো প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা সত্ত্বেও, আমি বিশ্বাস করি না যে, যোহন বাপ্তাইজক, আন্দ্রিয়, নথনিয়েল অথবা অন্য যে কোন শিষ্যের এসব উপাধির অর্থ সম্পর্কে সমন্বিত ধারণা ছিল। যোহন বাপ্তাইজক, যিনি এখানে বলেছেন, “ঐ দেখ! ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার নিয়ে যান!” পরবর্তীতে যখন তাকে জেলে বন্দী করা হয় এবং সেখান থেকে লোক পাঠিয়ে তিনি যিশুকে জিজ্ঞেস করতে বলেন, “যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না, আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব?” (লূক ৭:২০)। এই প্রশ্ন ইংগিত দেয় যে, যোহন পুরোপুরি যিশুর পরিচয় বুঝেন নি, যদিও যিশুর পরিচয় সম্পর্কে তিনি নাটকীয় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে তার নিজের কিছু প্রত্যাশা ছিল। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যে ঈশ্বরের মেষশাবক আসবেন এবং রোমীয়দের বিতাড়িত করবেন, যেরূপ প্রত্যাশা সকলেরই ছিল। তিনি যখন দেখলেন যে যিশু কেবল প্রচার করে যাচ্ছেন, তিনি বিভ্রান্ত হলেন।

ঈশ্বরের মেষশাবক তাঁর লোকদের পাপের কারণে তাদেরই প্রাপ্য শাস্তি থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

যিশু যোহনের বার্তাবাহকদের বলেছেন, “তোমরা যাও, যা দেখলে ও শুনলে, তার সংবাদ যোহনকে দেও; অন্ধেরা দেখতে পাচ্ছে, খঞ্জেরা চলছে, কুষ্ঠরোগীরা শুচিকৃত হচ্ছে, বধিরেরা শুনছে, মৃতেরা উত্থাপিত হচ্ছে, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে” (লূক ৭:২২)। সন্দেহকারী যোহনকে যিশু তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাঁর কৃত অলৌকিক কাজগুলোর ইংগিত দিয়েছিলেন। তিনি যিশাইয় ৬১: ১-২ক পদে উল্লিখিত মশীহ-বিষয়ক ভাববাণীর দিকেও ইংগিত করেছেন, যেখানে লেখা আছে:

“প্রভু সদাপ্রভুর আত্না আমাতে অধিষ্ঠান করেন,
কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে

সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করেছেন;
তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন,

যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বেঁধে দিই;
যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি,
ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি;
যেন সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বছর ……………… ঘোষণা করি।”

এখানে মনে হয়, যিশু যেন বলছিলেন: “যোহন, যদি তুমি সত্যিকার অর্থে তোমার বাইবেল অধ্যয়ন করতে, তাহলে যার আগমনের কথা ছিল সেই ব্যক্তি আমি কি না এমন প্রশ্ন তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে না। তোমাকে আরেক জনের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তুমি তো প্রথম দেখাতেই তাঁকে পেয়ে গেছ। আমিই ঈশ্বরের সেই মেষশাবক।”

অনুরূপভাবে, পিতরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন, যদিও তিনি কৈসরীয়া ফিলিপীতে তার মহান স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। যিশু কে, শিষ্যদেরকে করা তাঁর এমন প্রশ্নের উত্তরে, পিতর বলেছিলেন, “আপনি সেই খ্রিষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র” (মথি ১৬:১৬)। যিশু এই স্বীকারোক্তিকে নিশ্চিত করেছেন এবং যিশু কে, সে সম্পর্কে পিতরের ধারণাকে “ধন্য” ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ঠিক এর পর ‍মুহূর্তেই, যখন যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে বলেন যে তাঁকে দুঃখভোগ করতে এবং মৃত্যুবরণ করতে যিরূশালেমের দিকে যেতে হবে, এটা শুনে পিতর তাঁকে অনুযোগ করেছেন এবং বলেছেন, “এটি আপনার প্রতি কখনও ঘটবে না!” (১৬:২২খ)। এক মিনিট আগে পিতর দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করেছেন যে যিশুই মশীহ, কিন্তু পরের মিনিটেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন যে, যীশুর পক্ষে মশীহ হওয়া বলতে কি বুঝায়, তা তিনি সত্যিকার অর্থে বুঝেন নি।

আমরাও, অবশ্যই, একই ধরণের বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকি। আমরা যখন মাত্র পুর্ণাঙ্গ ছবিটির দিকে তাকাই, ক্রুশ, পুনরুত্থান, স্বর্গারোহণ এবং পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্নার সেচনের বিষয়গুলোকে বিবেচনা করি, কেবলমাত্র তখনই আমরা ঈশ্বর তাঁর বার্তাবাহকের মধ্যদিয়ে যে ঘোষণা করছিলেন, তার গভীরতা ও প্রাচুর্যতা বুঝতে শুরু করি, যে ঘোষণায় তিনি বলছিলেন, “ঐ দেখ! ঈশ্বরের মেষশাবক যিনি জগতের পাপভার নিয়ে যান!”

এই লেখাটি আর. সি. স্প্রৌল রচিত যোহনের টীকা থেকে নেয়া হয়েছে।


এই প্রবন্ধটি মূলতঃ লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজ ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল
আর. সি. স্প্রৌল
আর. সি. স্প্রৌল
ডঃ আর. সি. স্পৌল লিগোনিয়ার মিনিস্ট্রিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা, ফ্লোরিডাস্থ স্যানফোর্ড-এ সেন্ট এ্যান্ড্রুস চ্যাপেল -এর প্রতিষ্ঠাতা পালক, রিফরমেশন বাইবেল কলেজের প্রথম সভাপতি, এবং টেবলটক ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। তার রেডিও প্রোগ্রাম, রিনিউইং ইয়োর মাইন্ড, আজও প্রতিদিন সমস্ত পৃথিবী জুড়ে, শত-শত রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার হয়ে থাকে এবং সেগুলো অনলাইনে শোনারও সুবিধা রয়েছে। একশতেরও বেশি পুস্তক তিনি লিখেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দ্যা হোলিনেস অফ গড, চোজেন বাই গড, এবং এভরিওয়ানস্‌ এ্যা থিওলজিয়্যান। শাস্ত্রের নির্ভূলতার পক্ষ-সমর্থন করার ক্ষেত্রে এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপর দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে ঈশ্বরের লোকদের স্থির থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে সমস্ত বিশ্ব জুড়ে তিনি জনপ্রিয়।