
মার্টিন লুথার সমন্ধে ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত
28-10-2025ন্যায্যতা সমন্ধে ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত
ঈশ্বরের বাক্য শুধুমাত্র বিশ্বাস হেতুই ন্যায্যতা বিষয়ক মূল্যবান মতবাদ পরিষ্কারভাবে শিক্ষা দেয়। সকলেই যারা বিশ্বাস করে, “তারা বিনামূল্যে তাঁরই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্মিকগণিত হয়। তাঁকেই ঈশ্বর তাঁর রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করেছেন (রোমীয় ৩:২৪-২৫)। যেখানে এই মতবাদের বিশাল ধর্মতাত্ত্বিক তাৎপর্য রয়েছে এবং এটা গভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ অধ্যয়নের বিষয়ও হতে পারে, তাই ঈশ্বরের সকল লোকদের ন্যায্যতা মতবাদের এই পাঁচটি সত্যতা সম্বন্ধে জানা উচিত।
১. ন্যায্যতা চমৎকার এক সান্ত্বনা।
প্রথমত, আমাদেরকে এই মতবাদের বিস্ময়কর সান্ত্বনা সম্পর্কে জানা উচিত। ন্যায্যতা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই যীশু খ্রীষ্ট সম্পাদন করেছেন। আমাদের পাপের কারণে পাওয়ার যোগ্য শাস্তি তিনি ক্র্রুশে তাঁর ত্যাগস্বীকারমূলক মৃত্যুবরণের মধ্যদিয়ে পরিশোধ করেছেন। তাঁর মৃত্যু ঈশ্বরের ন্যায়বিচারকে সন্তুষ্ট করেছে এবং ঈশ্বরের ক্রোধকে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। যীশু আবার ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি তাঁর ধার্মিক বাধ্যতা দ্বারা এক সিদ্ধ জীবন-যাপন করেছেন। খ্রীষ্টের সন্তুষ্টি-সাধন এবং তাঁর সিদ্ধ ধার্মিকতা অনুগ্রহে বিশ্বাসের মধ্যদিয়ে আমাদের মধ্যে আরোপীত হয়েছে। অতএব, সকল বিশ্বাসীর এটা জেনে সান্ত্বনা পাওয়া উচিত যে, পিতা খ্রীষ্টেতে থাকা আমাদের দেখেন যেন যীশু যেমন তেমনি আমরাও পাপহীন এবং সিদ্ধ হয়েছি।
২. ন্যায্যতা সর্বোৎকৃষ্ট আশীর্বাদ নিয়ে আসে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের জানা উচিত যে, ন্যায্যতার মধ্যে ঈশ্বর সর্বোৎকৃষ্ট আশীর্বাদ আমাদের উপর স্থাপন করেছেন। অনুগ্রহে বিশ্বাসের মধ্যদিয়ে, আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক এবং অনন্ত জীবনের উত্তরাধিকারী। অনন্ত জীবনের আশীর্বাদ এখনই আমাদের উপর দেয়া হয়েছে, ঠিক যেমন যীশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন : “যে কেউ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পেয়েছে” (যোহন ৩:৩৬)। অনন্ত জীবন এক বিশেষ ধরণের বা গুণগতমান সম্পন্ন জীবন। অনন্ত জীবন মানে এমন সিদ্ধ স্বর্গ-সুখপূর্ণ হৃদয় যা যথার্থভাবে ঈশ্বরকে প্রেম করে, মন যা সত্যিকারে তাঁকে জানে, ইচ্ছা যা সম্পূর্ণভাবে তাঁকে অনুসরণ করে। ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে এই নূতন এবং অনন্ত জীবনের শুরু আমাদের মধ্যে বাস করছে। আমরা যারা এখনই আত্মিকভাবে আমাদের উত্তরাধিকার হিসেবে অনন্ত জীবন গ্রহণ করেছি, তারা উত্তরাধিকারী হয়েছি। এবং একদিন শীঘ্রই, যখন যীশু গৌরবের সাথে ফিরে আসবেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে দেহে ও আত্মায়, অনন্ত জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করব। যীশু আমাদেরকে সিদ্ধ এবং ঈশ্বরের সাথে অবিনশ্বর সহভাগিতা বিষয়ক অনন্ত জীবন দান করেছেন। আমরা যারা বিশ্বাস দ্বারা ন্যায্যগণিত হয়েছি, তাদের উচিত অনন্ত জীবনের এই সর্বোৎকৃষ্ট আশীর্বাদ উদযাপন করা।
ন্যায্যতার মতবাদ ত্রিত্ত্ব ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে আমাদেরকে সাহায্য করে যিনি স্বয়ং তাঁর সাক্ষাতে আমাদের ধার্মিকগণিত করতে আবশ্যক সবকিছুই করেন।
৩. ন্যায্যতা মানে ঈশ্বরের সাথে বিদ্যমান শান্তি।
আমরা যখন এই আশীর্বাদগুলোকে স্মরণে রাখি, সেগুলো আমাদেরকে ন্যায্যতার তৃতীয় সত্যের দিকে চালিত করে, তা হলো : ঈশ্বরের সাথে বিদ্যমান আমাদের শান্তি। খ্রীষ্টেতে, ঈশ্বরের কাছে আমাদের সকল বাধ্যবাদকতা চুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের এবং ঈশ্বরের মাঝে হিসেব-বহির্ভূত আর কিছুই নেই। কিন্তু একজন পাপীর কাছে এই শান্তির বাস্তবতা গ্রহণ করা খুবই কঠিন হতে পারে। কেসপার অলিভিয়েনুস, যিনি হিডেলবার্গ ক্যাটেকিজমের রচয়িতাদের একজন, তিনি লিখেছেন, “পাপের ক্ষমা লাভ বিশ্বাস করার চেয়ে কঠিন আর কিছুই নেই।” কিন্তু আমরা সত্যিকারে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছি যদি বিশ্বাস না করি, আমরা এও বিশ্বাস করব না যে, ঈশ্বরের সাথে আমাদের শান্তি রয়েছে। ড. আর. সি. স্প্রৌল এ নিয়ে বেশ ভালই বলেছেন : “প্রায়শঃ ঈশ্বরের অনুগ্রহ গ্রহণ করাও কঠিন একটা বিষয়। আমাদের মানবীয় একগুঁয়েমিতা আমাদেরকে আমাদের নিজের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে বলে, অথবা অতি-ধার্মিকতার কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে মিটিয়ে ফেলতে চাই। কিন্তু বাস্তব সত্যতা হচ্ছে, আমরা নিজেরা ঈশ্বরের সাথে মিটিয়ে ফেলতে পারি না। আমরা এতই ঋণী যে পরিশোধ করতে পারি না। বিশ্বাস দ্বারা ন্যায্যতা হলো এটাই।” আমরা আমাদের নিজেদের আত্মত্যাগ এবং নিজেদের বাধ্যতা দ্বারা ঈশ্বরের সাথে শান্তি পেতে পারি না। এবং আমাদের চেষ্টা করারও দরকার নাই। খ্রীষ্ট তাঁর আত্মত্যাগ এবং তাঁর বাধ্যতার মধ্যদিয়ে এই শান্তি সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বাস আমাদেরকে আমাদের নিজেদের থেকে অন্যত্র তাকাতে এবং শুধুমাত্র খ্রীষ্টের কাজের উপরে নির্ভর করতে আহবান করে। আমাদের এবং ঈশ্বরের মাঝে যা কিছুই ছিল – আমাদের পাপ, দোষ এবং দণ্ডাজ্ঞা – সেই সমস্ত কিছুই খ্রীষ্টের উদ্ধারজনক কাজের দ্বারা পরিষ্কার করা হয়েছে। খ্রীষ্টেতে বিশ্বাস দ্বারা, ঈশ্বরের সাথে এখন আমাদের শান্তি রয়েছে (রোমীয় ৫:১)।
৪. ন্যায্যতা ভবিষ্যৎ আশা যোগায়।
ঈশ্বরের সাথে আমাদের বর্তমান শান্তি আমাদেরকে চতুর্থ সত্যের দিকে চালিত করে : আমাদের ভবিষ্যৎ আশা আছে। খ্রীষ্টের কাজের কারণে এখন ও চিরকাল ঈশ্বরের সাথে আমাদের শান্তি আছে । খ্রীষ্টিয়ানদের ভবিষতের জন্য ভয়ে জীবন যাপন করার দরকার নেই, এমন কি ঈশ্বরের সম্মুখে শেষ বিচারে দাঁড়ানোর বিষয় চিন্তা করে ভয় পাওয়ারও দরকার নেই। ন্যায্যতা ঈশ্বরের সকলের-জন্য-একবারের ঘোষণা যে আমরা তাঁর দৃষ্টিতে ধার্মিক। ঈশ্বরের এ রায়ের কখনও রহিত হবে না অথবা বাতিল হবে না। এমন কি চুড়ান্ত বিচারও সহজভাবে খ্রীষ্টের প্রতিজ্ঞার সত্যতাকে নিশ্চিত করবে এবং প্রমাণ করবে : “সত্য, সত্য, আমি তোমাদেরকে বলছি, যে ব্যক্তি আমার বাক্য শুনে, ও যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হয়েছে, এবং বিচারে আনীত হয় না, কিন্তু সে মৃত্যু হতে জীবনে পার হয়ে গিয়েছে” (যোহন ৫:২৪)। ন্যায্যতা আমাদের জন্য ভবিষতের, বিশেষভাবে যখন আমরা ঈশ্বরের বিচারের আসনের সামনে উপস্থিত হব, তখনকার আশাও দেয়।
৫. ন্যায্যতা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে অনন্তকালীন গৌরব দান করে।
পরিশেষে, এই পর্যন্ত আমরা যে সমস্ত কিছু বিবেচনা করেছি তা ন্যায্যতা মতবাদ সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত এমন সবশেষ এবং সর্বোত্তম বিষয়ের দিকে চালিত করে। এটা কেবলমাত্র ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই অনন্তকালীন গৌরব দান করে। এই সমস্ত গৌরব ঈশ্বরেরই কারণ আমাদের পরিত্রাণের জন্য তিনিই চিরকাল থেকে চিরকাল ধরে সমস্ত কিছু করেছেন। পিতা সমস্ত অনন্তকালীনতা থেকে তাঁর লোকদের জন্য চিরন্তন প্রেম স্থাপন করেছেন। তাঁর অনন্তকালীন প্রেম থেকেই, তিনি তাঁর লোকদেরকে তাদের পাপ থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর পুত্রকে এই জগতে পাঠিয়েছেন। যীশু খ্রীষ্ট স্বেচ্ছায় এই জগতে এসেছেন এবং তাঁর জীবন, মুত্যু, এবং পুনরুত্থান দ্বারা আমাদের পরিত্রাণ সাধন করেছেন। পিতা এবং পুত্র উভয়েই পবিত্র আত্মাকে প্রেরণ করেছেন যিনি তাঁর বাক্যের মধ্যদিয়ে আমাদের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করেন। আমাদের বিশ্বাস তাঁর অনুগ্রহের দান, যার দ্বারা আমরা ন্যায্যগণিত হই। পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে চিরকাল বাস করেন, আমাদেরকে যীশুর সাথে যুক্ত রাখেন এবং খ্রীষ্টের সকল আশীর্বাদের ভাগী করেন। ন্যায্যতার মতবাদ আমাদেরকে ত্রিত্ত্ব ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে সাহায্য করে যিনি আমাদেরকে তাঁর সম্মুখে ধার্মিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই করেন। ন্যায্যতার মুল্যবান এই মতবাদের উপরে আমাদের আলোকপাত আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের প্রশংসা এবং গৌরব করতে আমাদের সর্বদাই সাহায্য করুক।
এই প্রবন্ধটি ৫টি বিষয় আপনার জানা উচিত-এর অংশবিশেষ থেকে সংগৃহীত।
এই প্রবন্ধটি মূলতঃ লিগনিয়্যার মিনিস্ট্রিজ ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল।


